চলতি বিশ্বকাপে বেশ হতাশাজনক পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চলমান আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩-এর লিগ পর্ব থেকেই বাদ পড়েছে দলটি। এই হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে(বিসিবি)দুষছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের অনেকে।তাদের মধ্যে রয়েছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক হয় ১৯৯৯ সালে। ওইসময় আইসিসির সহযোগী দেশ হয়েও পাকিস্তান আর স্কটল্যান্ডকে হারায় টাইগাররা।
অথচ বিশ্বকাপের চলমান ১৩তম আসরে সপ্তমবারের মতো অংশ নিয়েও ৯ ম্যাচের মধ্যে ৭টিতে হেরে সবার আগেই আসর থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের এমন বাজে পারফরম্যান্সের কারণে রীতিমতো হতাশ সাবের হোসেন চৌধুরী।
দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমার মনে হয় জবাবদিহিতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে বিসিবির সকল সদস্যদের পদত্যাগ করা উচিত। যেহেতু এটা সমষ্টিগত ব্যর্থতা। তারা দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
ঢাকা- ৯ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘ক্রিকেট আমাদের দেশের নাম্বার ওয়ান খেলা, এখানে কোটি কোটি বাংঙ্গালির আবেগ জড়িত। অথচ দেশের ক্রিকেট এমন একটি বোর্ডের দ্বারা পরিচালনা হয় যেটি সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অযোগ্য এবং অপেশাদার।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ ১৯৯৯ সালে আমাদের বিশ্বকাপ অভিষেকে, আইসিসির সহযোগী দেশ হয়ে আমরা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটি ম্যাচ জিততে সক্ষম হই (পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে)। আর এখন, ২৩ বছরের টেস্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা জিতলাম ৯ ম্যাচে ওই দুটিতেই। বিস্ময়কর!’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আক্ষরিক অর্থেই পেছন দিকে হাঁটছি। যেখানে আফগানিস্তানের মতো দেশ যারা কিনা আমাদের ১৭ বছর পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেল এবং যাদের নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তারা এগিয়েই যাচ্ছে। আমরা নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হেরে গেলাম যারা কিনা টেস্ট-খেলুড়ে দেশই নয়। আরেকটা দেশ আয়ারল্যান্ড যারা এই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি, কিন্তু দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।একারণে আমি এই বিশ্বকাপকেই সবচেয়ে ব্যর্থ আসর হিসেবে দেখি এবং বিসিবি তাদের সবচেয়ে খারাপটা বরাদ্ধ রেখেছিল এই বিশ্বকাপ অভিযানের জন্যই।’
বিশ্বকাপের আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে হেড কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনে বিসিবি। যেভাবে তার আগের মেয়াদে অপেশাদার উপায়ে বিদায় ঘটেছে, এটা কী ভালো সিদ্ধান্ত ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা জানিনা সে কেন বিদায় নিয়েছিল, দ্বিতীয় মেয়াদে কেন দায়িত্ব পেল সে কথা বাদই দিলাম। এবারে বা দুটো ক্ষেত্রেই কি তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় স্বচ্ছভাবে পূর্ণ ও উন্মুক্ত আলোচনা হয়েছিল?
আপনি কি মনে করেন বর্তমান বিসিবির নেতৃত্বে অধিনায়ক ও তার সহকারী নির্ধারণ করতে সাধারণ প্রক্রিয়া মানা হয়? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই দুটি পজিশনই বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং বাছাই করতে গেলে সতর্কভাবে বিবেচনা ও মূল্যায়ন করতে হয়। যে কেউ আশা করবে, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি আসলেই শুদ্ধ হবে। কিন্তু এই প্রশ্নটা বিসিবির দিকেই করা উচিত।
ভারতে অনেক কিছু হয়েছে যা দলে শৃঙ্খলা ও সংহতির অভাব তুলে ধরে। মিডিয়ায় নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলেছিলেন, কিছু ইস্যুতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি যেগুলোতে তার পদ অনুযায়ী সে সুযোগ আছে। এটা নির্দেশ করে যে বোর্ড নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে একক আধিপত্যর সুযোগ দিয়েছে যা বুমেরাং হয়েছে। আপনি কী এই ধারণার সঙ্গে একমত?
জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এখানে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে আপনি যার কথা বলছেন তিনি বর্তমানে নেতৃত্বের অধীনে সবসময় সুবিধা পেয়ে আসছেন এবং একাধিক, পরস্পরবিরোধী ভূমিকায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এটা আরও মজার যে অ্যালান ডোনাল্ডকে মিডিয়ায় কথা বলার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, সেখানে বাকিদের জন্য যে নিয়ম খাটে এই ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে তার উপরে। ব্যর্থ নেতৃত্ব থেকে এই ব্যক্তির দূরে সরে যাওয়ার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত এবং এটি অবশ্যই নতুন কিছু নয়।
প্রসঙ্গত,বিসিবির সভাপতি থাকাকালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলে এবং টাইগাররা টেস্ট স্ট্যাটাস মর্যাদা পায় ।সূত্র: ডেইল স্টার