‘আমার মেয়ে এমিলিয়ার প্রতি আপনার অসাধারণ মানবিক আচরণের জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।এমিলিয়া আপনাদের সবাইকে ওর বন্ধু, শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে,প্রকৃতপক্ষেই ওর প্রিয় এবং খুব ভাল মানুষ মনে করে।’ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে এমনিভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি এক নারী।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলাকালে জিম্মি করা ইসরায়েলিদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস? এ প্রশ্নের জবাবে অনেকের মনে শঙ্কা রয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। তাদের একজন ড্যানিয়েল অ্যালোনি।মুক্তি পাওয়ার পরই হামাসের হাতে জিম্মি থাকাকালীন তার মেয়ের প্রতি মানবিক আচরণের জন্য হামাস যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন। সোমবার হামাসের কাসেম ব্রিগেড শাখার অফিশিয়াল টেলিগ্রাম পেইজে এটি পোস্ট করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা ওই চিঠিটি তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড-এ প্রকাশিত হয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি ২৪০ জনের মধ্যে ছিলেন ড্যানিয়েল অ্যালোনি ও তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে এমিলিয়া। ওইসময় ড্যানিয়েলের বোন ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তারা দক্ষিণ ইসরায়েলের কিবুতজে ছিলেন। টানা ৪৯ দিন গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি থাকার পর মুক্তি পান মা ও মেয়ে।
চিঠিটি মূলত হিব্রু ভাষায় লেখা হলেও টেলিগ্রামে প্রকাশ করার সময় এটির আরবি অনুবাদসহ এর সঙ্গে ইসরায়েলি ওই মা ও তার মেয়ের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়।
হিব্রু ভাষায় হাতে লেখা ওই চিঠিতে ড্যানিয়েল বলেন,‘আমার মেয়ে হামাসের সঙ্গে শুধু ভালো সম্পর্কই গড়েনি বরং তাদের সাহচর্যে সে নিজেকে একজন রানী ভাবতে শুরু করেছিলো।যদিও শিশুদের বন্দি করা উচিত নয়, তবুও আপনাকে এবং এ দীর্ঘ সময়ে অন্যান্য আরও যেসব সদয় মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তাদের ধন্যবাদ। আমার মেয়ে গাজায় রানীর মতো থেকেছে।’
হামাসের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তার চিঠিটি শেষ করেছেন ড্যানিয়েল। তিনি বলেন,‘গাজায় আপনি যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন এবং যে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা সত্ত্বেও আপনার এমন সদয় আচরণ আমার মনে থাকবে।’
ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলিদের সুসম্পর্ক কবে আসবে তার জন্য আফসোস করে ড্যানিয়েল অ্যালোনি ওই চিঠিতে লেখেন,‘এই পৃথিবীতে আমরা যদি সত্যিই ভালো বন্ধু হতে পারতাম।’
চিঠির শেষাংশে অ্যালোনি গাজাবাসীকে শুভকামনা জানান। তিনি লিখেন-‘আপনাদের সকলের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করছি...আপনার এবং আপনার পরিবারের সন্তানদের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং ভালবাসা।’
প্রসঙ্গত, আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ি আল আকসা মসজিদের অপবিত্রতা এবং কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে তারা নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গাজায় অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, গত বছর থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের শহরগুলোতে সামরিক অভিযান দেশটির সেনাবাহিনী। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে রকেট হামলা চালায় হামাস। আর এর জবাবে বিমান হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল।
হামাসের হামলায় দেশটির ১ হাজার ২০০ জন বেসমারিক নিহত হন। সেদিন ইসরায়েলের ২৪০ জনকে জিম্মিও করে হামাস। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিনই গাজায় নির্বিচারে বোমা হামরা শুরু করে ইসরায়েল বাহিনী। এর পর থেকে অব্যাহত হামলায় গাজার ১৫ হাজারের বেশি বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।হামলার ৪৯ তম দিনে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।