টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খুব একটা মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। তবুও প্রথম দিনেই অলআউট হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল একটি উইকেট। তাইজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের লড়াই কতক্ষণ চলে সেটিই ছিল দেখার। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ খেলতে পারলো কেবল এক বল। সাউদির বলে বোল্ড হয়ে গেছেন শরিফুল।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ৩১০ রান।
৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন এজাজ প্যাটেল। তার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পড়া বলে কাট করতে যান জাকির, কিন্তু জায়গা ছিল না এর জন্য। ৪১ বলে ১২ রান করে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় জাকিরকে।
এরপর মাহমুদুলের সঙ্গী হন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি শুরু থেকেই ছিলেন কিছুটা মারমুখী। ৩৫ বলের ইনিংসে ছক্কাই হাঁকান তিনটি, অথচ গত ১৫ ম্যাচেও এতগুলো ছক্কা হাঁকাননি তিনি। এমন ব্যাটিংয়ে পর তার ইনিংসের শেষটা হয়েছে হতাশাতেই।
গ্লেন ফিলিপসের ফুলটস বল বেরিয়ে এসে খেলতে যান শান্ত। কিন্তু এগিয়ে আসায় ব্যাটের টাইমিংটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। ব্যাখ্যাতীত শটে ডিপ মিড অনে দাঁড়ানো কেইন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার আউটের পর ব্যাটার, বোলার ও ফিল্ডার সবার চোখেই ছিল বিস্ময়।
শান্ত আউট হওয়ার পর মুমিনুল হককে নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরিও পেয়ে যান তিনি। তবে দারুণ ধৈর্য, মনোসংযোগের ইনিংসটি সেঞ্চুরি ছুতে পারেনি। ইশ সোধির বলে স্লিপে দাঁড়ানো মিচেলের হাতে ক্যাচ দেন মাহমুদুল। ১৬৬ বলের ইনিংসে ১১ চারে ৮৬ রান করে আউট হন তিনি।
তার আগেই অবশ্য সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল। ব্যাকফুটে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। চা বিরতিতে যাওয়ার আগে ৫ বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ।
নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী হন অভিষিক্ত শাহাদাৎ হোসেন দীপু। তারা দুজন ১০ বল খেলার আগেই দ্বিতীয় সেশন শেষ হয়। কিন্তু ফেরার পর মুশফিকুর রহিমও দায়িত্বহীনভাবে আউট হয়ে যান। এজাজ প্যাটেলের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে তেড়েফুড়ে খেলতে যান তিনি। কিন্তু ২২ বলে ১২ রান করা ব্যাটার মিড অফে দাঁড়ানো উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দেন।
এমন হতাশার পর পরের তিন স্বীকৃত ব্যাটার সেটি বাড়িয়ে দেন আরও। কাইল জেমিসনের বাউন্সারে কী করবেন যেন বুঝেই উঠতে পারেননি মিরাজ, ক্যাচ দেন স্লিপে। ফিলিপসের বলে শান্তর মতোই অদ্ভুতভাবে আউট হন শাহাদাৎ।
তার নিচু হওয়া বল কবজির মোচড়ে খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে দাঁড়ানো হেনরি নিকোলসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৫৪ বল খেলে ২৪ রান করেন তিনি। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার সোহানও আউট হন ফিলিপসের বলেই, লেগ স্টাম্পের বাইরের বল তার ব্যাটে লাগলে উইকেটরক্ষক ব্লান্ডেল দারুণ এক ক্যাচ নেন। টেস্ট অভিষেকে চার উইকেট পান তিনি।
তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের রান তিনশতে নিয়ে যাওয়ার আশা দেখাচ্ছিলেন নাঈম হাসান। কিন্তু তিনিও জেমিসনের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। ৩ চারে ২৭ বলে ১৬ রান করেছিলেন নাঈম। কিন্তু শেষদিকে অলআউট হতে হয়নি বাংলাদেশকে। শেষ উইকেট জুটিতে ২০ রান করে অপরাজিত ছিলেন শরিফুল ও তাইজুল ইসলাম। সেটি প্রথম বলেই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দিনে।
কিউইদের হয়ে ফিলিপসের শিকার ৪টি। অথচ বল হাতে তার অতোটা সুখ্যাতি নেই বললেই চলে। উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি। কিন্তু আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে যেন পুরোদস্তুর স্পিনারই বনে গেলেন। ফিলিপস ছাড়াও দুটি করে উইকেট কাইল জেমিসন ও এজাজের।