আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ইটভাটার ভিতরে চলছে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ

ইটভাটার ভিতরে চলছে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ

দক্ষিণে চুল্লিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। উত্তরে শুকানো হচ্ছে কাঁচা ইট আর পশ্চিমে ইট ভাটার কার্যালয়। ভাটার মাঝখানে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য  মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ চলছে। ইতোমধ্যে ঘরের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমন দৃশ্যর দেখা মিলবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে গেলে। 

উপজেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে চলমান ইটভাটার ভিতরে বসবাসকারিরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ ইটভাটার চুল্লি ও চিপনি থেকে নির্মানাধীন ঘরের দুরত্ব প্রায় ৩০-৩৫ ফুট। এখানে ঘর নির্মিত হলেও কেউ বসবাস করতে পারবে না। এটা বসবাসের অনুপযোগি একটা জায়গা। এখানে মানুষের বসবাস অসম্ভব ব্যাপার। এসব মন্তব্য করেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক মতিন মোল্লা। তিনি বলেন, কামারদহ ইউনিয়নে আরও অনেক খাস জায়গা রয়েছে। সেখানেও ঘর নির্মাণ করা যেত। তারপরও কি উদ্দেশ্যে ইটভাটার ভিতর ঘর নির্মিত হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি সবাইকে ক্ষুব্ধ করেছে। 
 
উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বর্তমান সরকার সারাদেশে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ভুমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ২৫০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে কামারদহ ইউনিয়নে ৩৭টি, কাটাবাড়িতে ১৭৫টি, দরবস্তে ২৩টি, হরিরামপুর ও নাকাই ইউনিয়নে ১৫টি। এবছর প্রতিটি ঘর নির্মাণে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কামারদহ ইউনিয়নে ৩৭টির মধ্যে ঘোড়ামারা গ্রামে তিনটি সারিতে ৩২টি নির্মিত হচ্ছে। চলমান ইটভাটার ভিতরে ১০৪ শতক খাস জায়গায়  প্রায় দেড়মাস আগে ঘর নির্মাণ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।
 
গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা ঘেঁষে কামারদহ ইউনিয়ন। উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার এবং ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে ঘোড়ামারা গ্রাম। গ্রামে প্রায় নয়বছর আগে ১৫ বিঘা ভাড়া নেওয়া জমিতে বিটিবি নামের ভাটাটি স্থাপিত হয়। তখন থেকে ভাটায় ইট পোড়াচ্ছিলেন বগুড়ার এক ব্যবসায়ী। গতবছর তাঁর কাছ থেকে ভাটার স্থাপনা কিনেন গোবিন্দগঞ্জের ব্যবসায়ী আবু রায়হান। তিনি ওই খাস জায়গা ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করতেন। আবু রায়হান বলেন, ঘরগুলো হচ্ছে ভাটার মাঝখানে। প্রশাসনের নির্দেশে তিনি  জায়গা খালি করেছেন। এসব ঘর পরিবেশবান্ধব হবে কিনা না। 
আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ভুমি ব্যবহারের নীতিমালা ৬ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পরিবেশের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে, এমন কোন প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কতৃক ২০১০ সালের ১৭ আগষ্ট ওই নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। নীতিমালা থাকার পরও পরিবেশের ক্ষতি করবে এমন জায়গায় ঘর নির্মাণ চলছে।
 
গত ২ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটভাটার ভিতরে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণের দৃশ্য। ইটভাটার চুল্লি ও চিপনি থেকে নির্মানাধীন দক্ষিণ পাশের ঘরের দুরত্ব প্রায় ৩০-৩৫ ফুট। মাঝে পোড়া ইটের দুটি স্তুপ। উত্তরপাশে ঘরের পাঁচফুট দুরেই কাঁচা ইটের স্তুপ। স্তুপ সংলগ্ন জায়গায় শুকানো হচ্ছে কাঁচা ইট। পুর্বদিকে বোরো ফসলের জমি এবং পশ্চিমে ভাটার কার্যালয়। ঠিক ভাটার মাঝখানে গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ চলছে। ইতোমধ্যে ঘরের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে ইট পোড়ানো ও ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। কয়েকজন রাজমিস্ত্রি ঘরের গাথুনির কাজ করছেন। নিচ থেকে ঘরের প্রায় পাঁচ ফুটের বেশি গাথুনি উপরে উঠেছে। এর পাশেই ইট পোড়ানোর কয়লা মেসিনে গুড়া করা হচ্ছে। 
 
ইটভাটার ভিতরে ভুমিহীনদের ঘর নির্মাণ কতটুকু পরিবেশবান্ধব, তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘোড়ামারা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ভাটার কারণে এসব ঘরে বসবাসকারিরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ দুষিত হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আ.ক.ম. আখতারুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, দীর্ঘসময় থাকলে ইটভাটার কালো ধোয়া ফুসফুসে ও চামড়ায় ক্যানসার, নিউমেনিয়া, অ্যাজমা হতে পারে। পোড়া মাটির গন্ধে পেটের সমস্যা ও কিডনির সমস্যা হয়ে নষ্ট হতে পারে। 
 
এবিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফ হোসেন বলেন, ইটভাটাটি অবৈধ। তারা খাসজমি দখল করে খাচ্ছিলো। তিনি তাদের কাছ থেকে জায়গাটি উদ্ধার করেছেন। ইটভাটার হিসেব করে তো ঘর (গুচ্ছগ্রাম) নির্মাণ বন্ধ করবেন না। বরং তারা ইটভাটা উঠানোর ব্যবস্থা করবেন। জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, ইটভাটা বন্ধ করা হবে।
 
এ প্রসঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক মতিন মোল্লা আরও বলেন, পুরোনো ভাটা উচ্ছেদ করতেও সময়ের দরকার। এ সময়ের মধ্যে বসবাসকারি গৃহহীনরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন। সর্বনাস যা হয়ে যাবে। 
 
এ প্রসঙ্গে বর্তমান ভাটা মালিক আবু রায়হান বলেন, তিনি ভাটার স্থাপনা কিনেছেন। আগের মালিক কিভাবে চালিয়েছেন, জানি না। অবৈধ ভাটা কিভাবে চালাচ্ছেন, এনিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। 
 
 
এসআই/
 
 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ইটভাটার | ভিতরে | চলছে | মুজিব | বর্ষের | ঘর | নির্মাণ