বাংলাদেশের জনগণ আগের অবস্থায় আর ফিরে যেতে চায় না, তারা পরিবর্তন চায়। জাতি সবচেয়ে বড় ধরনের একটি সুযোগ পেয়েছে। এর আগে কখনোই সব মানুষ একটি বিষয়ে এতটা ঐক্যবদ্ধ হয়নি যে আমাদের পরিবর্তন দরকার।
গ্যালো সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি ৩০ সেপ্টেম্বর সম্প্রচার করে এনপিআর। সাক্ষাতকারে বাংলাদেশে হওয়া জুলাই আন্দোলন, আন্দোলন পরবর্তী সময়, সংস্তার ও নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন উপস্থাপক মিশেল মারটিন। তার প্রশ্নটি ছিলো, ‘আপনাকে সমর্থন দেওয়া সামরিক নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৮ মাস ক্ষমতায় থাকা উচিত। আর বিরোধী দলগুলো নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। আপনার জন্য কী ১৮ মাস সময় যথেষ্ট?’
মিশেল মারটিনের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার জন্য, না হয় আপনি যত দেরি করবেন, তত অজনপ্রিয় হয়ে পড়বেন; সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছে, না, আপনাকে অবশ্যই এই সংস্কার শেষ করতে হবে। তাই আপনাকে এই দীর্ঘ সময় থাকতে হবে। কারণ, সবকিছুর সংস্কার না করে আমরা বাংলাদেশ ২.০-তে যেতে চাই না। তাই এই বিতর্ক চলছে।’’
এসময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত প্রাণ দেওয়ার মানে কী দাঁড়াল! এর কোনো মানে হয় না। কারণ তারা সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাই আমাদের নতুন একটি (দেশ) গড়ার কাজ শুরু করতে হবে। ‘
এসময় উপস্থাপক মিশেল মারটিন বলেন, ‘এটি আপনার জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। পাশাপাশি এটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ আপনার জন্য। আপনি কী মনে করেন?’
জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটি খুবই এক্সসাইটিং। আপনি যদি এটিকে নেতিবাচক হিসেবে মনে করতে পারেন, তবে আমি এটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। জাতি সবচেয়ে বড় ধরনের একটি সুযোগ পেয়েছে। এর আগে কখনোই সব মানুষ একটি বিষয়ে এতটা ঐক্যবদ্ধ হয়নি যে আমাদের পরিবর্তন দরকার। ‘
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মাজারে হামলা ও মব জাস্টিসের শিকার হয়ে মৃত্যু বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘লোকজন বিপ্লবের আবহে ছিল। বিপ্লবী পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। অনেকে খুন হয়েছে। যাদের কারণে তাদের সহযোদ্ধাদের প্রাণ গেছে, তাঁদের খুঁজছিলেন তাঁরা। এ জন্য তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সমর্থকদের আক্রমণ করেছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যখন সংখ্যালঘুদের কথা বলছেন। এ সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়, তার (শেখ হাসিনা) দলের সঙ্গে যুক্ত। তাই আপনি এটা আলাদা করতে পারবেন না যে তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে নাকি হিন্দু হওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা আক্রান্ত হয়েছেন।’
এসময় প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কিন্তু যখনই আমরা সরকারের দায়িত্ব নিই, শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। সবাই বলতে পারে, আমাদের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে একে অপরকে আক্রমণ করতে হবে।’
এসময় ড. ইউনূসের কাছে উপস্থাপক মিশেল মারটিন জানতে চান , ‘প্রতিশোধপরায়ণতার মানসিকতা থেকে সংস্কারের দিকে মানুষের নিয়ে যেতে পারবেন কি না?’
এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিশোধ নেয়ার ঘটনাটি মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মতো হয়তো ছিল। এরপর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে। তবে বিক্ষোভ হচ্ছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশির ভাগ বিক্ষোভই মজুরি বাড়ানো, চাকরির দাবি নিয়ে, যারা আগের সরকারের সময় চাকরি হারিয়েছিলেন। তারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন অন্য কিছুর জন্য নয়, শুধু অন্য রাজনৈতিক দল করার কারণে। ফলে সবাই তাদের দাবিদাওয়া পূরণের চেষ্টা করছেন। কারণ, তারা বঞ্চিত হয়েছেন। ‘আমরা তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। দেখুন, আপনাদের ১৫ বছরের দুঃখ-দুর্দশা আমরা ১৫ দিনে সমাধান করতে পারব না। বিষয়টি সুরাহা করতে আমাদের কিছু সময় দিন। আপনারা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। আমাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা সমাধান করতে হবে।’
এমআর//