উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও ইন্ডয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পরাজিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-কে হারিয়ে রাজ্যটিতে সরকার গঠন করতে চলেছে ৬ দলের সম্মিলিত জোট জোরাম পিপলস মুভমেন্ট বা (জেডপিএম)।
আনন্দবাজারসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার(৪ ডিসেম্বর)রাজ্যের ভোট গণনার পর দেখা যায় ৪০ আসনের বিধানসভায় এবার ২৭ আসনে মিজোরামে জয়ী হয়েছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট। আর বিদায়ি মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার দল এমএনএফ জয়ী হয়েছে ১০টি আসনে। এ রাজ্যে তুলনামূলকভাবে দুর্বল বিজেপি ও কংগ্রেস দল পেয়েছে যথাক্রমে দুটি এবং একটি আসন। গতবার এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দখল করেছিলো ৫টি আসন।
মিজোরামে জেডপিএম-এর ভোটের হার ছিল ৩৭.৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে, এমএনএফ পেয়েছে ৩৫.১০ শতাংশ ভোট। পূর্ব মিজোরামের প্রায় পুরোটাই দখল করেছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট। অপরদিকে,এমএনএফ এর দখলে গেছে পশ্চিম মিজোরামের প্রায় পুরোটাই।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চার রাজ্যের মধ্যে তিন রাজ্যেই সরকার গঠন করতে চলেছে ভারতীয় জনতা দল (বিজেপি। রাজ্য তিনটি হলো-মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়। অন্যদিকে, তেলাঙ্গানা রাজ্যে সরকার গঠন করতে চলেছে কংগ্রেস। রোববার(৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে। চলতি বছরের নভেম্বর মাস জুড়ে ভোট নেওয়া হয় পাঁচ রাজ্যে। চারটি রাজ্যের ফল রোববার ঘোষণা করা হলেও মিজোরামের ফল ঘোষণা করে সোমবার।
মিজোরামে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন কে এই লালডুহোমা?
দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মিজোরামের গদিতে বসতে চলেছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষী বাহিনীর সাবেক প্রধান লালডুহোমা।
ফলাফলের পরই গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন,‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) বা তার পরে কোনো একদিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের আর্জি জানানো হবে। চলতি মাসেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে।’
২০১৮ সালেই মিজ়োরামে দু’দশকের দ্বিমেরু রাজনীতির প্রথা ভেঙে দিয়েছিলেন ভঅরতের সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। ৪০ বছরের নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, প্রতি দশকে মিজোরামে সরকার পাল্টায়। সেই ধারা মেনেই ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সরকার পাল্টে দিয়েছিলেন। কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে দখল করেছিলেন বিরোধী দলনেতার পদ। জোরাম পিপলস্ মুভমেন্ট (জেডপিএম) নেতা লালডুহোমা এ বারের বিধানসভা ভোটে শাসক মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-কে পর্যুদস্ত করে মিজোরামের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন।
আশির দশকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলেন আইপিএস অফিসার লালডুহোমা। ১৯৮২ সালে আসাম থেকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে সোজা ইন্দিরার নিরাপত্তা অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
ইন্দিরা জানতে পেরেছিলেন, ১৯৭৭ সালে আইপিএস হওয়ার আগে রাজ্য প্রশাসনিক সার্ভিসের অফিসার হিসাবে মিজ়োরামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী সি ছুংগার সহায়ক ছিলেন তিনি। লালডুহোমার রাজনৈতিক জ্ঞান দেখে ইন্দিরাই ১৯৮৪ সালে ফের তাঁকে মিজ়োরামে পাঠান।
পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে লোকসভার সাংসদ হন লালডুহোমা। দায়িত্ব পান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিরও।রাজীব গান্ধীর জমানায় লালডেঙ্গার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের সঙ্গে ঐতিহাসিক মিজো চুক্তির মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।সূত্র: আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া