পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী মরিয়াম (২৫) কে ইফতারে খাবারের সাথে বিষ প্রয়োগ হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী আনিছুর রহমানের (৩৫) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মরিয়ামের বাবা কিনার উদ্দীন গেল শুক্রবার রাতে বোদা থানায় আনিছুরকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
গেল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে আনিছুরকে উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের তার নিজবাড়ি থেকে আটক করে বোদা থানা পুলিশ।
আনিছুরকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে প্রেরণ করেছে পুলিশ। আনিছুর উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া হাজীপাড়া এলাকার মছির উদ্দীনের ছেলে। আনিছুর স্থানীয় তেপুকুরিয়া বাজারে দর্জির কাজ করতেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, আনিছুরের বাবা মছির উদ্দীন (৬৫), তার ভাই আশরাফুল ইসলাম (৩০), লাইলী (৩০), আনারুল ইসলাম (৩০) ও আব্দুল লতিফ (৬০)।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৫ই মার্চে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া হাজীপাড়া এলাকার মছির উদ্দীনের ছেলে আনিছুর রহমানের সাথে একই এলাকার কিনার উদ্দীনের মেয়ে মরিয়ামের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে কিনার উদ্দীন তার মেয়ের জামাতা আনিছুরকে ব্যবসায়ীক কাজে লাগানোর জন্য ১ লাখ টাকা দেন। বিয়ের ৬ মাস না পেরোতেই আনিছুর আরো ১ লাখ টাকার জন্য তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে মারপিট করতো। এভাবেই পেরিয়ে যায় বছর। আনিছুর-মরিয়মের সংসারে এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করে। নাম রাখা হয় তাসনিন। বর্তমানে তার বয়স ১৮ মাস। পরে মরিয়াম সন্তানের কথা চিন্তা করে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে সংসার করতে থাকেন।
এরই মাঝে চলতি বছরের গেল ২০ এপ্রিল (বুধবার) বিকেলে আবারো যৌতুক বাবদ ১ লাখ টাকা দাবী করে আনিছুর। পরে মরিয়াম তা দিতে অস্বীকার করলে তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে আনিছুর। পরে ওইদিন বিকেলে মরিয়ামকে তেপুকুরিয়া বাজারে তার দর্জির দোকানে নিয়ে যান আনিছুর। মরিয়াম রোজা থাকায় তাকে ইফতার সামগ্রী কিনে দেন তিনি। ইফতারের সময় হলে ইফতার গ্রহনের সাথে সাথে মরিয়ামের মুখ থেকে হালকা ফেনা বের হতে থাকে। তাকে চিকিৎসার জন্য বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে মরিয়মের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনজুরুল ইসলাম জানান, মামলার প্রধান আসামী আনিছুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়েছে। তার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, আমরা মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। মামলার অন্য আসামীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
মির্জা রুমন
