আর্কাইভ থেকে জাতীয়

প্রিজাইডিং অফিসারদের ইসির নির্দেশনা

প্রিজাইডিং অফিসারদের ইসির নির্দেশনা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং আইন ও বিধিগত দিকগুলো মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রিজাইডিং অফিসারদের যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো– ১.স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স : ভোটগ্রহণের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে। এর জন্য একই ধরনের ভিন্ন ভিন্ন নম্বর যুক্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স (ট্রান্সলুসেন্ট ব্যালট বাক্স) ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেক ভোটকক্ষের জন্য একটি করে এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি অতিরিক্ত হিসেবে ব্যালট বাক্স প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ভোটকক্ষে একইসঙ্গে একাধিক ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা যাবে না। ২. ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর অন্য একটি ব্যালট বাক্স প্রদান : ভোটগ্রহণের একপর্যায়ে কোনো ভোটকক্ষে যদি কোনো ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়ে যায় বা ব্যালট পেপার গ্রহণের জন্য তা আর ব্যবহার করা না যায়, তাহলে প্রিজাইডিং অফিসার ওই ব্যালট বাক্স তার নিজের স্বাক্ষর ও সিলমোহর দ্বারা এবং উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টদের মধ্যে যারা ইচ্ছুক তাদের সিলমোহর বা দস্তখত দ্বারা সিল করে দেবেন এবং বাক্সকে একটি সুরক্ষিত স্থানে রাখবেন। অতঃপর ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে ভোটকক্ষে যে পদ্ধতিতে ব্যালট বাক্স দিতে হয় সেই পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক পুনরায় একটি নতুন ব্যালট বাক্স ব্যবহার করবেন। ৩. ব্যালট পেপারের অপর পৃষ্ঠায় অফিসিয়াল সিলমোহর ও স্বাক্ষর প্রদান : ভোটারের পরিচয় শনাক্তকরণের পর প্রকৃত ভোটারকে ব্যালট পেপার প্রদানের সময় ব্যালট পেপারের অপর পৃষ্ঠায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩১ এর দফা (২)(ঘ)-এর বিধান অনুসারে অফিসিয়াল সিল দ্বারা ছাপ এবং স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারকে ব্যালট পেপার হস্তান্তর করতে হবে। ৪. ভোটচিহ্ন প্রদান সিলমোহরে স্ট্যাম্প প্যাডের কালি লাগাবার পদ্ধতি : যে সিল (মার্কিং সিল) দ্বারা ব্যালট পেপারে ভোটচিহ্ন দিতে হবে, সেই সিলটি স্ট্যাম্প প্যাডের কালি লাগাবার পর তাতে অধিক কালি লেগেছে কি না তা ভোটারকে পরীক্ষা করে নিতে পরামর্শ দেবেন। মার্কিং সিলে স্ট্যাম্প প্যাডের কালি অধিক পরিমাণ লাগলে তা প্রথমে কেবল সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সম্মুখে রক্ষিত সাদা বা অব্যবহৃত অন্য কোনো কাগজে ছাপ দিয়ে কালির অবস্থা পরীক্ষা করে মার্কিং প্লেসে ব্যালট পেপারের নির্দিষ্ট স্থানে ছাপ দেয়ার জন্য প্রত্যেক ভোটারকে অবশ্যই পরামর্শ দিতে হবে। স্ট্যাম্প প্যাডটিতে কালির প্রকৃত অবস্থা মাঝে মাঝে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার/পোলিং অফিসার পরীক্ষা করে দেখবেন। ৫. বিভিন্ন ধরনের সিলের ব্যবহার : ভোটগ্রহণের জন্য রাবারের মার্কিং সিল ও অফিসিয়াল সিল সঠিক ও ব্যবহার যোগ্য কি না তা ব্যবহার করে যাচাই করতে হবে। ৬. ভোটার তালিকা যাচাইকরণ : যে ভোটকেন্দ্রের এবং ভোটকক্ষের জন্য যে ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হবে তা ওই কেন্দ্রের অথবা কক্ষের জন্য প্রযোজ্য কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণ করতে হবে। ৭. ভোটকক্ষে ভোটারদের ক্রমিক নম্বর প্রদর্শন : ভোটারদের যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয় এবং সহজেই তাদের ভোটকেন্দ্র শনাক্ত করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে আগেই ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটগ্রহণের দিন ভোটকক্ষ শনাক্তকরণের সুবিধার্থে ভোটকক্ষের প্রবেশ পথে ভোটারদের ভোটার সংখ্যার ক্রমিক নম্বর প্রদর্শন করে একটি বিবরণী সেঁটে দিতে হবে। ৮. ভোটদানের জন্য মার্কিং প্লেস স্থাপন : ব্যালট পেপারে ভোটচিহ্ন প্রদানের জন্য যেখানে মার্কিং প্লেস নির্ধারণ করা হবে সে স্থানের গোপনীয়তা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। মার্কিং প্লেস যাতে কোনো জানালার পাশে স্থাপন না করা হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তা একান্তই সম্ভব না হয়, তবে ভোটদানের জন্য মার্কিং প্রেসের আশপাশে জানালা থাকলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে অথবা ওই মার্কিং প্লেসের আশপাশের দেয়াল, বেড়া, বেষ্টনী ভগ্ন/ভাঙ্গা বা উন্মুক্ত থাকলে তা এমনভাবে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কেউ ভোটদানের সময় কোনোক্রমেই দেখতে না পায় বা কোনো ইঙ্গিত করার সুযোগ না পায়। ৯. একটি কক্ষে একাধিক ভোটকক্ষ না করা : ভোটকেন্দ্র হিসেবে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষের মধ্যে একাধিক ভোটকক্ষ স্থাপন করা কোনোক্রমেই সমীচীন নয়। কারণ তাতে ভোটারদের নির্ধারিত ভোটকক্ষে ভোটদানে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং ফলস্বরূপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্রের পরিসর এবং ফলস্বরূপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একাধিক ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয় তাহলে প্রত্যেক ভোটকক্ষের অবস্থান বা এলাকা সুনির্দিষ্টভাবে চট বা চাটাই অথবা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করতে হবে, যাতে এক ভোটকক্ষ থেকে অন্য ভোটকক্ষের মধ্যে যাতায়াত করা না যায় বা কথাবার্তার আদান-প্রদান করা সম্ভব না হয়। ১০. ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা : প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে এবং ভোটগ্রহণের সময় আলোর স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। প্রতিবিধান স্বরূপ ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ১১. সুশৃঙ্খলভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থাকরণ : ভোটগ্রহণের দিন অপরাহ্ণের দিকে বেশি সংখ্যক ভোটার ভোটদানের জন্য জমায়েত হতে পারেন। শেষ মুহূর্তে যাতে এমন ভোটাররা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য কর্মরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা করতে হবে। ১২. নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন : কোনো ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার পক্ষে কেউ ক্যাম্প করতে পারবে না। ১৩. ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দীর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশে পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ : ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত ৪০০ গজ চৌহদ্দীর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশে পোস্টার, হ্যান্ডবিল বা ঐরূপ কোনো প্রকার প্রচারপত্র থাকলে তা ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই সরিয়ে ফেলতে হবে। কেউ যেন ভোটের জন্য ক্যানভাস না করতে পারেন বা কাউকে ভোটদানের জন্য উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত করতে না পারেন, সেই দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। ১৪. ভোটগ্রহণ শুরু : ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ সকাল ৮টায় শুরু করতে হবে। কোনোক্রমেই বিলম্বে ভোটগ্রহণ শুরু করা যাবে না। ১৫. ভোটারদের বহনের জন্য প্রার্থীর যানবাহন ব্যবহার না করা : প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট এবং সমর্থকরা যাতে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনয়নের জন্য কোনো প্রকার যানবাহন ব্যবহার করতে না পারেন অথবা আচরণ বিধিমালা অনুসরণ করেন, সে বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের করণীয় ও বর্জনীয় দিকগুলো উল্লেখ করে সতর্ক করে দিতে হবে। অন্যথায় আচরণ বিধিমালা ভঙ্গের দায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রিজাইডিং | অফিসারদের | ইসির | নির্দেশনা