আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। অং সান সূচির গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মাথায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে জান্তা বাহিনী। বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড দাপটে এখন তাদের জান ওষ্ঠাগত। এতটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে এর আগে কখনো পড়তে হয়নি। শুরুতে জান্তা ক্ষমতার দাপট দেখালেও বর্তমান পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরণের হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। এখন সব বিদ্রোহী গোষ্ঠী একট্টা হয়ে লড়ছে জান্তা সেনাদের বিরুদ্ধে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি যোগ দেওয়ায় আরাকান আর্মির হামলা জোরদার হয়েছে। বিদ্রোহী এই তিন দল মিলে গঠন করেছে- থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।
বিদ্রোহী এই তিন দলের জোটের হামলায় পুরো ব্যাকফুটে চলে গেছে জান্তা বাহিনী। সামরিক টহল চৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কয়েকটি শহর ও কয়েকটি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের হাতে।
এই জোটের সঙ্গে যোগ দিয়ে জান্তাবিরোধী গণতন্ত্রকামীরা গঠন করেছে পিপল ডিফেন্স ফোর্স। রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর অবস্থা খুবই শোচনীয়। বোমা হামলা করে তিনটি টাউনশিপে অবশিষ্ট চৌকি রক্ষা করার চেষ্টা করছে তারা।
আরাকান আর্মি এরই মধ্যে দুই উচ্চপদস্থ জান্তা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বেশ কয়েকজন সেনাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তারা ১৩ নভেম্বর থেকে ১৭০টির বেশি জান্তা ঘাঁটি এবং ফাঁড়ি দখল করেছে। একই সাথে রাখাইন রাজ্যের ছয়টি শহর ছাড়াও চিন রাজ্যের শহর পালেটোতে জান্তা ঘাঁটি এবং ফাঁড়ি দখল করেছে আরাকান আর্মি।
সবশেষ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যের মিনবায়া পৌর এলাকায় মোতায়েনকৃত ৩৭৯, ৩৮০ এবং ৫৪১ পদাতিক বাহিনী থেকে জব্দ করা ওইসব অস্ত্রের প্রদর্শন করেছেও আরাকান আর্মি।
অন্যদিকে, এরই মধ্যে শান রাজ্যের কোকাং সীমান্ত এলাকার বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স। এছাড়া, তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিও একই রাজ্যের ৭টি শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে।
বিদ্রোহীদের একের পর এক হামলায় পর্যদুস্ত জান্তা বাহিনী এখন নতুন কৌশল নিয়েছে। আরাকান আর্মির দাবি, জান্তা বাহিনী এখন রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদেরকে তাদের টার্গেটে পরিণত করেছে। দেশটির নৌবাহিনী কিয়াকফু পৌর এলাকায় তিনটি জেলে নৌকা থেকে ৯ জেলেকে আটক করেছে।