শীতের রাতেই নাকি গায়েব হয়ে গিয়েছিল আস্ত একটি বাস। দিন দুয়েক পরে বাসের খোঁজ পাওয়া গেলেও ওই ঘটনা ঘিরে উঠেছিল অজস্র প্রশ্ন। যার সঠিক উত্তর মেলেনি আজও।
বাসের ভিতর তিনটি পচাগলা দেহ কীভাবে এল? সারা দিন যাতায়াতের পর প্রায় পেট্রলহীন বাসটি গন্তব্য থেকে শত যোজন দূরে পৌঁছলই বা কী করে? চিনের “রুট নম্বর ৩৭৫”-এর শেষ বাসটির রহস্য আজও তাই কুয়াশামোড়া।
চিনে প্রায় লোকগাথায় পরিণত হয়েছে রুট ৩৭৫-এর শেষ বাসের গায়েব হওয়ার ঘটনাটি। এ নিয়ে নানা দাবি-পাল্টা দাবি শোনা যায়। অনেকে বলেন, ওই ঘটনার সাক্ষী ছিল নভেম্বরের হাড়কাঁপানো এক শীতের রাত। ঘন কুয়াশায় মোড়া সে রাতেই নাকি ঘটেছিল অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড। কী সেই ঘটনা?
১৯৯৫ সালের ১৪ নভেম্বর। হাঁড় কাঁপানো শীতের প্রায় মাঝরাতে ৩৭৫ নম্বর রুটের শেষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা। ইউয়াং মিং হুয়ান নামে ওই বাসস্টপে অপেক্ষায় ছিলেন আরও এক অল্পবয়সি ছেলে। শেষ বাসটি কাছে এসে দাঁড়াতেই বৃদ্ধা এবং যুবকটি তাতে চড়ে বসেন। বাসে উঠে চালকের কাছের আসনে বসেছিলেন বৃদ্ধা। যুবকটি তার পিছনে কিছুটা দূরের আসনে ঠাঁই নেন।
বাসটির গন্তব্য ছিল শিয়াং শান শহর বা ফ্রেগরেন্ট হিল নামের এক জায়গা। ইউয়াং মিং হুয়ান বাসস্টপ থেকে যা মাত্র সাতটি স্টপ দূরে। একে একে অনেকেই ওই বাস থেকে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেমে যেতে থাকেন। কয়েকটি স্টপ পরে ওই বাসে ছিলেন কেবলমাত্র বৃদ্ধা এবং ওই যুবকটি। এবং অবশ্যই বাসের চালক এবং এক মহিলা কন্ডাক্টর।
কিছুক্ষণ পর চালকের নজরে আসে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দু’জন ব্যক্তি বাস থামানোর ইশারা করছেন। ওই দুই যাত্রীর সামনে বাস থামান তিনি। বাসের দরজা খুলতেই দেখা যায়, দু’জন যাত্রী নন তাদের মাঝে আরও একজন রয়েছেন। চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকায় হয়তো তৃতীয় জনকে চোখে পরেনি চালকের। তৃতীয় ব্যক্তি ওই দুই যাত্রীর কাঁধে ভর করে বাসে উঠেছিলেন। অবিন্যস্ত ওই যাত্রীর মাথা নিচু করা। আধো অন্ধকারে ঠাওর করা যায় না তার মুখ। এক সময় ওই পাঁচ যাত্রীকে নিয়ে আবারও চলতে শুরু করে বাসটি।
কয়েকটি স্টপ পরে বাসের ভিতরে চিলচিৎকার জুড়ে দেন বাসে থাকা বৃদ্ধা। পিছনের আসনে বসা যুবকটি নাকি পকেটমার। তার টাকার ব্যাগটি হাতিয়ে নিয়েছেন। এ দাবি করে বেজায় চেঁচামেচি করতে থাকেন বৃদ্ধা। শীতের রাতে এমন ঝামেলায় বিরক্ত হয়ে বাস থামিয়ে দেন চালক। বৃদ্ধা এবং যুবককে জোর করে বাস থেকে নামিয়েও দেন। এরপর দু’জনের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় বাসটি।
বাস থেকে নেমে যুবককে নিয়ে কাছের একটি পুলিশ স্টেশনে যান বৃদ্ধা। সেখানে গিয়ে আরও অদ্ভুত দাবি করেন তিনি। পুলিশ অফিসারদের বৃদ্ধা জানান, ওই বাসের তিন যাত্রী আসলে অশরীরী। নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই যুবকের বিরুদ্ধে পকেটমারির অভিযোগ তুলে চেঁচামেচি জুড়েছিলেন। যাতে বাস থেকে তাদের নামিয়ে দেয়া হয়।
সহযাত্রী যুবকের নামে কোনও পুলিশি অভিযোগ করেননি বৃদ্ধা। উল্টে তাকে বলেন, ওই তিন যাত্রীরই পা দেখতে পাননি তিনি। বাসের জানলা দিয়ে হাওয়া এলে তা তিন জনেরই দেহ ভেদ করে চলে গিয়েছে।
বৃদ্ধার দাবি শুনে দু’জনের মানসিক স্থিতাবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন থানার পুলিশ অফিসরারা। এক সময় তাদের থানা থেকে বের করে দেন। তবে পরের দিন ওই বাস সংস্থার একটি নোটিস দেখে টনক নড়ে পুলিশদের। সেখানে লেখা, ‘গত রাতে আমাদের সংস্থার ৩৭৫ রুটের শেষ বাসটি চালক এবং এক মহিলা কন্ডাক্টর-সহ গায়েব হয়ে গিয়েছে।’
অনেকের দাবি, ওই নোটিস বেরোনোর পরের দিন গায়েব হওয়া বাসটির খোঁজ মেলে গন্তব্য থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে একটি পানির রিজার্ভারের কাছে।
এ ঘটনার তদন্তে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছিল, যা নাকি আরও রহস্যময়। সারা দিন চলাচলের পর বাসটির পেট্রল ফুরিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও গন্তব্য থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বাসটি কী ভাবে পৌঁছল?
তদন্তকারীদের দাবি ছিল, বাসটির উদ্ধারের সময় জ্বালানীর ট্যাঙ্কে পেট্রলের বদলে তাজা রক্ত পাওয়া গিয়েছিল। ফ্রেগরেন্ট হিল এলাকায় ওই বাসটিতে নাকি পাওয়া যায় তিন ব্যক্তির পচাগলা দেহ।
পুলিশের দাবি, দেহগুলিতে এতটাই পচন ধরেছিল যে সেটা কোনও মতেই দিন দুয়েক আগেকার হতে পারে না। ময়নাতদন্তের পরেও এ বিষয়ে মেলেনি কোনো সঠিক উত্তর। এমনকি ওই রিজার্ভারের আশপাশের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজেও অস্বাভাবিক কিছু ধরা পরেনি। ফলে এ ঘটনা ঘিরে রহস্যের জট আজও খুলেনি ।
এসি