চট্টগ্রামে এক ফ্রিল্যান্সারকে আটকের পর তার মোবাইল ফোন থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডল (৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা) সরিয়ে নেওয়ার সত্যতা পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
তিন সদস্যের সিএমপির অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে সিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আর এতে শাস্তি পেতে যাচ্ছেন ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য
সিএমপি কমিশনার (অ্যাডিশনাল আইজিপি) কৃষ্ণ পদ রায় গণমাধ্যমকে জানান, ‘তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিবি টিমের হেফাজতে থাকার সময় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন, এএসআই বাবুল মিয়া, শাহ পরান জান্নাত ও মো. মাইনুল হোসেন এবং কনস্টেবল মো. জাহেদ ও আব্দুর রহমান।
রুহুল আমিন এ ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছেন এবং এএসআই বাবুল মিয়া দুই সোর্সের মাধ্যমে বিটকয়েন সরিয়ে নিয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। অভিযুক্তদের সবাইকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে ফ্রিল্যান্সার আবু বকর সিদ্দিক ও ফয়জুল আমিন নামে আরও একজনকে গুলবাগ আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের একটি দল।
পরদিন মঙ্গলবার বিকালে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে সিএমপি অধ্যাদেশে একটি নন এফআইআর মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করে ডিবি পুলিশ। আদালত তাদের ১০০ টাকা হারে জরিমানা করে মুক্তি দেন।
তবে আদালতে পাঠানোর আগ পর্যন্ত ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে ফ্রিল্যান্সার আবু বক্কর গোয়েন্দা পুলিশের দলটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেন।
তার অভিযোগ, তার নিজের বাইন্যান্স (ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ; যা বাংলাদেশে অবৈধ) অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ দশমিক ৯৭৩৭ বিটকয়েন খোয়া গেছে। ডলারের হিসেবে এর পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশের হিসেবে প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
আবু বক্করের দাবি করেন, ছাড়া পেতে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার পরও ডিবি পুলিশের সদস্যরা তার বিটকয়েন হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু দেশে বিটকয়েন ব্যবহার অবৈধ হলেও আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার আর্জিতেও বিটকয়েনের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। শুধু লেখা হয়েছে, অনলাইন জুয়া খেলার অপরাধে আসামিদের গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ২ মার্চ আবু বকরকে পলাতক দেখিয়ে ও গোয়েন্দা পুলিশের দুই সোর্স মো. কাউসার আহম্মদ এবং শাহাদাত হোসেনকে আসামি করে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের অভিযোগে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন ডিবি’র এসআই মো. আলমগীর হোসেন। পরে সোর্স মো. কাউসারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
অপরদিকে আবু বকরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে ৫ মার্চ ৮ পুলিশ সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবু বকরের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।