ভূমধ্যসাগরে একটি রাবার ডিঙ্গি বিপদে পড়ার পর অন্তত ৬০ জন অভিবাসী মারা গেছে বলে বেঁচে থাকা অভিবাসীরা জানিয়েছেন।
মানবিক গ্রুপ এসওএস মেডিটারেনি পরিচালিত জাহাজ ওশান ভাইকিং ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। তারা উদ্ধারকারীদের বলেছেন, বেশ কয়েক দিন আগে লিবিয়ার উপকূলে জাওইয়া থেকে রওনা হয়েছিলেন তারা।
তিনদিন পর ডিঙ্গির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। নৌকাটিতে খাবার বা পানি ছিল না। এটি ভেসে ছিল।
জীবিতরা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে নারী ও অন্তত একজন শিশু রয়েছে। তারা ডুবে নয়, পানিশূন্যতা এবং ক্ষুধায় মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসওএস মেডিটারেনি বলেছে, ওশান ভাইকিং দলটি বুধবার দূরবীন দিয়ে ডিঙ্গিটি দেখেছে, যা গত শুক্রবার রওনা হয়েছিল। ইতালীয় উপকূলরক্ষীদের সহযোগিতায় তাদের একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মানবিক গ্রুপটি বলেছে, বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা খুব দুর্বল অবস্থায় ছিল এবং তারা সবাই চিকিৎসাসেবার অধীনে রয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন, যারা অজ্ঞান এবং গুরুতর অবস্থায় ছিল, তাদের আরও চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে সিসিলিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাকি ২৩ জন এখনও ওশেন ভাইকিং-এ রয়েছেন, সঙ্গে আরও রয়েছে ২০০ জনেরও বেশি অভিবাসী যাদেরকে অন্য দুটি নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
জাহাজটি প্রায় চার দিনের দূরত্বে আঙ্কোনা বন্দরের দিকে যাচ্ছে।
জাহাজে থাকা এসওএস মেডিটারেনির একজন মুখপাত্র বলেছেন, “যারা দুর্দশায় নৌকায় ছিলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে হারিয়েছিলেন, বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের মতে, তারা পানি ও খাবারহীন হয়ে পড়েছিল।”
“পথে মানুষ মারা গেছে। আমি একজন ব্যক্তির দেখেছি, যে তার স্ত্রী এবং দেড় বছরের বাচ্চাকে হারিয়েছে। শিশুটি প্রথম দিন মারা যায়, মা চতুর্থ দিন। তারা সেনেগালের বাসিন্দা। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ায়।”
ইইউর সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স বিবিসিকে বলেছে, গত শুক্রবার লিবিয়ার উপকূলের কাছে ৫০ জনেরও বেশি লোক নিয়ে একটি জাহাজ দেখতে পাওয়ার পরে তারা সতর্কতা জারি করে। এটি ওশান ভাইকিং দ্বারা তোলা একই রাবার ডিঙ্গি কিনা তা নির্দিষ্ট করেনি।
ফ্রন্টেক্স বলেছে যে তাদের একটি বিমান একটি রুটিন ট্রিপে লিবিয়ার রেসকিউ জোনের মধ্যে জাহাজটিকে দেখে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল।
ইইউ এজেন্সি বলেছে, এটি জাহাজটিকে সাহায্য করার জন্য এলাকার অন্য নৌকাগুলোতে একটি মেডে সতর্কতা জারি করেছে এবং ইতালীয় ও মাল্টিজ উদ্ধার সমন্বয় কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) গত সপ্তাহে বলেছে যে এক দশক আগে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক বছর ছিল, বিশ্বব্যাপী অভিবাসন রুটে কমপক্ষে আট হাজার ৫৬৫ জন মারা গেছে। জাতিসংঘ সংস্থা বলেছে, এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
রিপোর্টে দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগর ক্রসিংয়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালে কমপক্ষে তিন হাজার ১২৯ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ হয়েছে ২০১৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যায়।
আইওএম প্রজেক্ট ম্যানেজার জুলিয়া ব্ল্যাক বিবিসিকে বলেছেন, “এখন যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তত মানুষ পার হচ্ছে না।”
“এই বছর এখন পর্যন্ত ৩০০টি মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে যা গত বছরের মতো প্রায় একই।তাই আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে আমরা ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর সংখ্যার ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড-ব্রেকিং বছর দেখতে যাচ্ছি।”