কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভুল চিকিৎসায় মায়ের গর্ভে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পৌর সদরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় বেসরকারি আবেদীন হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) হাসপাতালে যান ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে গর্ভে মারা যাওয়া সন্তানের বাবা আজহারুল ইসলাম খান ভৈরব থানায় অভিযোগটি করেন। অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন উম্মুল খায়ের মাহমুদা, আমিন উদ্দিন আহম্মেদ ও ফারজানা রহমান।
স্বজনরা জানান, প্রসূতি প্রমি আক্তার ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি পৌর শহরের চণ্ডিবের খাঁ বাড়ির আজহারুল ইসলাম খানের স্ত্রী।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখেন শহরে আবেদীন হাসপাতালে। প্রমি খানম অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই আবেদীন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। হাসপাতালের চিকিৎসক আমিন উদ্দিন আহম্মেদ বুধবার (১৩ মার্চ) তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। রিপোর্ট দেখে হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক উম্মুল খায়ের রোগীর স্বজনদের জানান, সন্তান প্রসব হতে আরও এক মাস সময় বাকি আছে। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে রোগীর স্বজনরা শুক্রবার (১৫ মার্চ) চিকিৎসকের কাছে আবার নিয়ে যান। কিন্তু আবারও একই কথা বলেন ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা।
কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে এক পর্যায়ে চিকিৎসক উম্মুল খায়ের মাহমুদা বলেন, প্রসূতির শারীরিক অবস্থা বেশি ভালো না। রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। আপনারা রোগীকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যান। তখন তড়িঘড়ি করে রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঢাকার একটি হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানা যায়, তিন থেকে চার দিন আগেই গর্ভের সন্তান মারা গেছে।
স্বজনরা জানান, চিকিৎসকদের দেয়া ভুল তথ্যের জন্য অনাগত শিশুটির মৃত্যু হয়। ওই নারীর স্বামী আজহারুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন পর আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হয়। আমি টাকা-পয়সা ইনকাম করেছি পরিবারের জন্য। আবেদীন হাসপাতালের ডাক্তারদের ভুল তথ্য দেয়ার জন্য আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। একাধিকবার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরেও তারা সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। শুধু পরীক্ষার নামে টাকা নিয়েছে। সঠিক পরীক্ষা করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পর কয়েকটা পরীক্ষা করে ডাক্তার বলেন, আপনার সন্তানের হার্টবিট চলছে না। এরপর সিজার করে জানা যায়,গর্ভেই বাচ্চাটি মারা গেছে। আমি আবেদীন হাসপাতালের ডাক্তারদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সকালে টহলে ছিলাম হাসপাতালে লোকজন জড়ো হতে দেখে হাসপাতালে যাই। যাওয়ার পর জানতে পারি মায়ের পেটে একটি শিশু মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।