জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুর সাড়ে বারোটায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন তারা, ব্যানারে লিখাছিলো ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’। এছাড়াও পরে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন হাতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় একঘণ্টা অবস্থান করেন তারা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘অবন্তিকা মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’,‘ক্যাম্পাসে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘নিপীড়কের গদিতে, আগুন জ্বালো-আগুন জ্বালো’, ‘নিপীড়কের কালো হাত, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘নিপীড়কের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না’, ‘অবিলম্বে ফাইরুজ হত্যা, বিচার করো, করতে হবে’,বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, শুধু আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আমরা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত চাই। যে মামলাটি হয়েছে, সেখানে যেন প্রশাসন বাদী হিসেবে যুক্ত হয়।
শিক্ষার্থী ইয়াসিন পিয়াস বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, কেন এটা ঘটছে। এটা শুধু আম্মান ও দ্বীন ইসলামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া বলেন, অবন্তিকা ছাত্রীহলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। ছাত্রী হলে সমস্যা হয়েছিল, তাই সে বেরিয়ে এসেছিল। তাহলে হাউজ টিউটর ও হল প্রভোস্ট কেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল না। আমরা নিশ্চিন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চাই, নিপীড়নের শিকার হতে চাই না। অবন্তিকার মত এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করছি।
এদিন আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুতে ন্যায়বিচার চেয়ে শোক র্যালি ও মানববন্ধন করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবন্তিকার আত্মহত্যার পেছনের কারণ তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
অবন্তিকার সহপাঠী সেতু পাল বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি অবন্তিকার সঙ্গে এমন হবে। যে সবসময় বলত, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা জড়িত তারা বেড়িয়ে আসুক।
মানববন্ধনে বিভাগের শিক্ষক আহমদ ইহসানুল কবির বলেন, আমার সঙ্গে তার সপ্তাহে তিন দিন ক্লাসে দেখা হতো। ক্লাসে সে অ্যাক্টিভ ছাত্রী ছিল, মেধাবী ছাত্রী ছিল। একসময় এই মেধা বিকশিত হতো। আমরা একটি নক্ষত্রকে হারিয়েছি। আমি বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা। আমরা চেষ্টা করেছি তাকে মানসিকভাবে শক্তি দিতে। একাধিকবার সতর্ক করেছি। হয়ত শেষ পর্যন্ত অবন্তিকা তার সমস্যাগুলো জানায়নি। জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। আমি তদন্ত কমিটিকে আমার বক্তব্য দিয়েছি। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পেতে সক্ষম হব।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আক্কাস সরকার বলেন, আমি আমার ৩৪ বছরের শিক্ষকতার জীবনে, অনেক ঘটনা দেখেছি কিন্তু অবন্তিকার মৃত্যু অত্যন্ত কষ্টের। তার চলে যাওয়া শুধু পরিবারের ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রের ক্ষতি। সে অনার্স শেষ করেছে। সে বিচারক হতে পারতো। রাষ্ট্রের কাছে দাবি তার আত্মহত্যার পিছনে কারণ বের করে, দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচার হোক। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক যাতে আর কেউ এই ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।
এসময় আইন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান সাদি, নুরুন্নাহার মজুমদার, মুনিরা জাহান সুমি, মেফতাহুল হাসান সান, মাহনুদা আমির ইভা, শারমিন আকতারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।