আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

খুলে গেলো দেশের অবাধ সমৃদ্ধির দ্বার

খুলে গেলো দেশের অবাধ সমৃদ্ধির দ্বার

প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর বহু-প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করা হলো আজ শনিবার (২৫ জুন)। যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত এই স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে গেল দেশের অবাধ সমৃদ্ধির দ্বার।

আজ সকালে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতুর ফলক উম্মুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী । এ সময় সেখানে বিদেশি কূটনীতিকসহ হাজারো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এর ফলে পদ্মার উভয় পাড়ে বসবাস করা লোকজনকে আর অসহায়ের মতো বসে থাকতে হবে না। এই সেতুর সংযোগের মাধ্যমে তারা এখন উভয় দিক যুক্ত হলো। রোববার (২৬ জুন) থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ সরাসরি সড়ক পথে ঢাকায় যেতে পারবেন।  তারা এখন এ সেতুর উপর দিয়ে মাত্র ছয় মিনিটে পদ্মা নদী পার হবেন।

স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগই স্থাপন করেনি না বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংযোগ ও বাণিজ্যের দ্বার খুলে দিলো।

এছাড়া, এই সেতু সাধারণভাবে সারা দেশের পাশাপাশি বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সমৃদ্ধি আনয়নের ক্ষেত্রে পরিবহন সময় ও  অন্য ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব রাখবে।

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পৌঁছান এবং পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত দেশের বৃহত্তম এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক এই শুভ মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি স্মারক ডাক টিকেট, স্মারক পত্র ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন এবং একটি বিশেষ সীল মোহর ব্যবহার করেন। এই সেতু মোট জাতীয় উৎপাদনে ১.২ থেকে ২ শতাংশ যোগ করবে কবলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিজ হাতে টোল প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অতিক্রমের টোল প্রদান প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন।  এর ফলে তিনি হন টোল প্রধানের মাধ্যমে পদ্মা সেতু পার হওয়া প্রথম ব্যক্তি। পরে তিনি জন সমাবেশে যোগ দিতে জাজিরা পয়েন্টে যান।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান স্থাপনের মধ্যদিয়ে  দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। পরে, একের পর এক ৪১টি স্প্যানের সবক’টি ৪২টি পিলারের উপর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর এর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমমুখী পদ্মা সেতুর পুরো অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়। নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৩০হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা (৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের জন্য ১ হাজার কোটি টাকাসহ) এবং  ১৩.৮ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের ব্যয় (আরটিডব্লিউ) হয় ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপন করা হয়।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরিয়তপুর জেলার জারিরা পয়েন্টে নদী শাসন ও পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন।

১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করেন। তিনি পদ্মা ও রূপসা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য জাপানের কাছে প্রস্তাব দেন। জাপান সরকার এ দুই নদীর উপর সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সম্মত হন। নদী হিসেবে পদ্মা একটি প্রমত্তা নদী। এ নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। জাপান তাঁর অনুরোধে পদ্মা ও রূপসা নদীর উপর নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপ করে রূপসায় সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে।

২০০১ সালে জাপান পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন জমা দেয়। জাপানের জরিপ প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর নির্মাণ স্থল হিসেবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়।
জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালোর ৪ জুলাই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। তবে, আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া পয়েন্টে সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর জন্য ফের জরিপ চালাতে জাপান সরকারকে অনুরোধ জানায়।

দ্বিতীয় দফা জরিপের পর জাপান পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে মাওয়া পয়েন্ট নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। ২০০৯ সালে আবারো ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ অন্তর্ভূক্ত করে। দায়িত্ব গ্রহণের ২২তম দিনে নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোনসাল ইকম’কে পদ্মা সেতুর নকশা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রথমে এ সেতু প্রকল্পে রেলওয়ে সুবিধা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, সেতুর চূড়ান্ত নকশায় রেল লাইন সুবিধা রাখা হয়।

২০১০ সালে এ নকশা চূড়ান্ত করা হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সংশোধনের কারণে এই প্রকল্প ব্যয় ২০হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে বিভিন্ন কারণ ছিল।

মির্জা রুমন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন খুলে | গেলো | দেশের | অবাধ | সমৃদ্ধির | দ্বার