গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি দ্রুত সময়ে কমলেও দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। দুর্গত এলাকায় ছিন্নমুল মানূষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া বন্যা দুর্গত অনেক জায়গায় চর্মরোগ, পানিবাহিতসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের কমিনিটি ক্লিনিকসহ সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবাদানকারী চিকিসা কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা মিলছে না। পাশাপাশি চিকিৎসালয় গুলো সারাক্ষন বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ করেন চরাঞ্চলের বানভাসীরা।
গাইবান্ধার জেলার বন্যা কবলিত চার উপজেলা সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর। এর মধ্যে যে সব এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার মধ্যে কামারজানি, মোল্লারচর, কাপাসিয়া, হরিপুর, ফজলুপুর, উড়িয়া, রতনপুর, ফুলছড়ি, গজারিয়া, এ্যারেন্ডাবাড়ি, কঞ্জিপাড়া, শ্রীপুর, তারাপুর, বেলকাসহ ২৫টি ইউনিয়ন।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের খাবারের কষ্টের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে নানা ধরনের রোগবালাই। সরকারী বাধে আশ্রয় নেয়া নেওয়াজ আলী বলেন, এবার বানের পানি দুই তিন থাকছিলো। বানের পানি কমে গেছে কিন্তু কয়েক দিন পানিতে হাটা চলা করায় হাতের ও পায়ের নোখের মাঝখানে ঘায়ের মতো লাল হয়ে গেছে। একে তো খাবারের কষ্ট তার উপর ঘায়ের জালা পোড়ায় জীবন অতিষ্ঠ হওযা গেছে। টেকা নাই তাই হলুদ আর কেরোসিন একসাথে করি ঘায়ের মধ্যে দিয়া থুসম। তাতে এনা আরাম হচে। পানি কমায় বাধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা এখন তাদের ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
বন্যা শেষে ঘরে ফেরা সুফিয়া বেগম বলেন, বাড়ি আসি দেখি ঘড়ের বেড়াটেরা সব ভাংগি গেছে। খাবার যা ছিল তা এই কয়দিনে খায়েএ ফেলাছি। এখন বাড়ি ঘর ঠিক করার টাকা কোটে পাম আর কি খায়া থাকমো। ।প্রতিটি বাড়িতে মানুষ আর গবাদি পশুর অবস্থা একই রকম হয়েছে। খাবারের কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই। কোন নতুন মানুষ দেখলেই বানভাসি লোকেরা ছুটে আসছে খাবারের আসায়। তারা বলছে ছবি আর খবর ছাপায়া কি হবে বাহে । তোমরা যখন হামার এটি আসছেন তাহলে একনা খাবার আনবার পান নাই। এ রকম আর্তনাথ প্রতিটি মানুষের মাঝে দেখা গেছে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের অবস্থা কাহিল। তাদের অনেকের ঘরে খাবার আছে। কিন্তু রান্না করার মতো জায়গা নাই। তাই পানিতে নেমে কলার ভেলায় চুলা রেখে তাতে রান্না করছেন। এক বেলার রান্না খাবার খাচ্ছেন তিন বেলায়। খাবার পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি চুলা জ্বালানোর মতো উঁচু স্থান নেই । সে কারনে পানির মধ্যে চৌকি উঁচু করে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। মলমূত্র ত্যাগের মতো কোন জায়গা নেই । সরকারীভাবে মেডিকেল টিম গঠনের কথা শোনা গেলেও দুর্গত এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার এস এম ফয়েজ উদ্দিন জানান, চার উপজেলার বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তালিকা করে এসব চাল বিতরণের করা হয়েছে।