আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি পিন্টু গ্রেপ্তার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি  পিন্টু গ্রেপ্তার

১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে  (৫০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গেলো শনিবার (২৫ জুন) রাতে র‌্যাব-২ এর একটি দল কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পাবনা অঞ্চলের প্রভাবশালী চরমপন্থি দলের প্রভাবশালী সদস্য। তার নিজেরও ছিল একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। পিন্টু অস্ত্রসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৯ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আত্মগোপনে যান তিনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। 

আজ রোববার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গেলো রাতে র‌্যাব-২ এর একটি দল কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৯৯৪ সালে পাবনা-ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা ও গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ঈশ্বরদী সদরের পিয়াখালী এলাকার মৃত সামাদ গার্ড ওরফে আব্দুস সামাদের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আসামি র‌্যাবকে জানায়, পিন্টু প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে পৌঁছালে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বগি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ওই ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেয়া হলে তদন্ত কর্মকর্তা ৩ এপ্রিল ১৯৯৭ সালে মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে পাঁচ জন আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাদের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

পরে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই গ্রেপ্তার জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলত। ১৯৮৮ সালে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ওই সব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি এলাকা ত্যাগ করে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় থাকলেও নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত করতেন তিনি। ২০১৫ সালে ঈশ্বরদীতে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন। 

গ্রেপ্তার পিন্টু জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তিনি ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে চম্পা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি এবং ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন। পরে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় তিনি তিন মাস কারাভোগ করলেও পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি নিয়ে ফেরারি হন। ওই মামলায় আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এছাড়াও ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা দায়ের হয়। এপর্যন্ত তার নামে একটি মৃত্যুদণ্ড ও একটি ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পরওয়ানা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ছয়টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে।

মির্জা রুমন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রধানমন্ত্রী | শেখ | হাসিনাকে | হত্যাচেষ্টা | মামলার | মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত | পলাতক | আসামি | | পিন্টু | গ্রেপ্তার