রানের ব্যবধানে টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার লঙ্কানদের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে ৪৬৫ রানে তাদের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার সেই লঙ্কানদের বিপক্ষে ফের রেকর্ড ব্যবধানেই হারতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তদের। রানের দিক থেকে ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয় দেখতে হলো সিলেটে। এশিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার এটি।
লঙ্কানদের ছুঁড়ে দেয়া ৫১১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যের সামনে টাইগারদের ইনিংস শেষ হলো ১৮২ রানে। সিলেটে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান ৩২৮ রানে। আগের দিনের ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দিন শুরুর পর চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ লড়েছে মুমিনুল হকের কল্যাণে। একপ্রান্তে টিকে থেকে দেখেছেন বাকিদের আসা যাওয়া। হার অনুমিতই ছিল। তবে মেহেদি হাসান মিরাজ আর শরিফুল ইসলামের কল্যাণে সেটা খানিক দেরিতেই এসেছে।
দিনের শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার এই ম্যাচে বেশি কিছু করতে পারলেন না। ৬ রান করে কাসুন রাজিথার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। ৫১ রানে ৬ উইকেট পতনের পর অনেকটা সময় মুমিনুলকে সঙ্গ দেন মিরাজ। দুজনে বেশ অনেকটা সময় দেখেশুনে ক্রিজে থেকেছেন। গড়েছেন দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি।
১০৫ বলে ৬৬ রানের জুটিতে কিছুটা আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছিলেন মিরাজ। সেটাই কাল হলো তার জন্য। রাজিথার দিনের দ্বিতীয় শিকার হলেন স্লিপে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর শরিফুল এসে মুমিনুলকে নিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন আরও ৪৭ রান। নিজে করেছেন ১২ রান। তবে ৪১ বল খেলার পর ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে তার। স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে গিয়ে রাজিথার বলে কট এন্ড বোল্ড জন তিনি। পরের বলেই ফিরে যান খালেদও।
শেষ ব্যাটার হিসেবে নাহিদ রানা ফিরেছেন ডাক মেরে। লাহিরু কুমারার বাউন্সারে পরাস্ত হন তিনি। ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল। বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয় তাতে।
আগের দিনে শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদাত হোসেন দীপু এবং লিটন কুমার দাস ফেরেন ডাক মেরে। এছাড়া পঞ্চম দিনে এসে ডাক মেরেছেন নাহিদ রানা এবং খালেদ হোসেন। সবমিলিয়ে পাঁচ ডাকে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।
যদিও সিলেট টেস্টে শুরুটা ছিল বাংলাদেশের। ১ম দিনে বাংলাদেশের হয়ে খালেদের দুর্দান্ত বোলিং এগিয়ে ছিল স্বাগতিকদেরই। কিন্তু জয়ের ক্যাচ মিসের সুবাদে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় লঙ্কানরা। সেটাও ভালোভাবেই লুফে নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। দুইজনেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস থামে ২৮০ রানে।
জবাবে বাংলাদেশকে শুরুতেই পড়তে হয় ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে। চরম দায়িত্বহীনতা দেখিয়েছে টপঅর্ডার এবং মিডলঅর্ডার। তবে তাইজুল ইসলাম, খালেদ আর শরিফুল ইসলামের দৃঢ়তায় ১৮৮ পর্যন্ত যায় বাংলাদেশ। ৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে সফরকারীরা। এবারেও টাইগার বোলারদের ওপর চড়াও হয় ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু। অধিনায়ক ধনাঞ্জয়ার ব্যাট থেকে এসেছে ১০৮ রান। আর ১৬৪ রান করে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন কামিন্দু মেন্ডিস। বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৫১১।
জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে তেমন কিছুই দেখা যায়নি টাইগার ব্যাটারদের মধ্যে। নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লিটন দাস আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটু শট খেলতে গিয়ে। আবার জাকির, জয়, দীপুরা ব্যর্থ হয়েছেন নিজেদের ওপর থাকা প্রত্যাশা পূরণ করতে। শেষ পর্যন্ত সিলেটে বাংলাদেশের সঙ্গী হলো ৩২৮ রানের বড় হার।