নাম মো. আবু সাঈদ। বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরের রাবারিষা ইউনিয়নের তালবারিয়া গ্রামে। ৩০ বছর বয়সী এই যুবক এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৩০ টি বিয়ে। আর এসব বিয়ের জন্য নিজেকে কখনো বাংলাদেশ বিমানের পাইলট, কখনও বা পুলিশের বড় কর্মকর্তা হিসবে পরিচয় দিতেন। এসব বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীর স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। একাধিক মামলা হলেও এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এলাকাবাসী গণমাধ্যমকে জানায়, ছোট বেলা থেকেই আবু সাঈদ বেশ ধূর্ত। ৪ বছর আগে-২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি- গুরুদাসপুর উপজেলার একটি ক্লিনিকে দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন তিনি।ওই ঘটনার পরে গা ঢাকা। তবে সশরীরে তাকে দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত দেখা যায় তাকে।
আবু সাঈদের প্রথম স্ত্রীর বাড়ি জামালপুরের মাউশি এলাকায়। ২০১০ সালে তাকে বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষে দুটি ছেলে রয়েছে আবু সাঈদের। ২০১২ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন রিয়া নামের এক সংগীত শিল্পীকে। রিয়ার বাড়ি রাজশাহী শহরে। ওই বছরে তৃতীয় বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রী কবিতার বাড়ি পাবনার চাটমোহর এলাকায়। চতুর্থ স্ত্রী সাথী। তিনি বসবাস করেন ঢাকাতে। ২০১৩ সালে তাদের বিয়ে হয়।
পঞ্চম স্ত্রী খাদিজা আক্তার সাদিয়া। তার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলায়। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তাকে বিয়ে করেন সাঈদ। গেলো ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে স্বামী আবু সাঈদের সন্ধানে টাঙ্গাইল থেকে এসেছিলেন পাঁচ নম্বর স্ত্রী দাবি করা খাদিজা আক্তার সাবিনা নামে এক নারী।
খাদিজা আক্তার সাবিনা গণমাধ্যমকে জানান, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে টিকটকে পরিচয় হয় আবু সাঈদের সঙ্গে। তখন তিনি পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে। তার বাবা-মা কেউ নেই। এতিমখানায় বড় হয়েছেন তিনি। এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে কথা হয়। একপর্যায়ে আমাদের ১৫ লাখ টাকা দেন-মোহরে বিয়ে হয়। টাঙ্গাইল সদরে আমার একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। এছাড়াও একটি এনজিও পরিচালনা করি। বিয়ের পর আবু সাঈদের ওপর আমার বিশ্বাস তৈরি হয়। এ কারণে আমার দুই বোন ও এক ভাতিজিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাঈদ ৩০ লাখ টাকা চান, আমরা তাকে সেই টাকা দেই। কয়েকদিন পর আমার কাছ থেকে আরও দশ লাখ টাকা নেন তিনি। কিছুদিন পরে তিনজনকেই নিয়োগপত্র দেন এবং বলেন তিন মাস পর চাকরিতে যোগদান করতে হবে।’
পরে সাঈদ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আরও টাকা নিয়েছিলেন বলে দাবি করে পঞ্চম স্ত্রী খাদিজা আরও বলেন, ‘বিয়ের পর সাঈদ আমার বাড়িতেই থাকত। তবে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন মেয়ে তাকে কল দিত। জিজ্ঞেস করলে বলত অফিসের সহকর্মী। একপর্যায়ে সাঈদের আসল ঠিকানা এবং তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। তবে সাঈদ বুঝতে পেরেছিল আমি সব জেনে গিয়েছি। এমনকি চাকরির জন্য যে নিয়োগপত্র দিয়েছিল সেগুলোও ভুয়া ছিল। এ কারণে আমার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান সাঈদ। তারপর থেকে তাকে খোঁজার চেষ্টা করেও পাইনি। এ সব ঘটনায় টাঙ্গাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে সাঈদের নামে মামলা করেছি।’
সাঈদের সন্ধান করতে গিয়ে তার আরও চার স্ত্রীর খোঁজ পান খাদিজা। তাদের সবার সঙ্গে তার (খাদিজা) যোগাযোগ হয়। সবার কাছ থেকেই বিয়ের পর বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে সাঈদ পালিয়ে যান বলে জানান খাদিজা।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো, উজ্জ্বল হোসেন বলেন, অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।