নিজ মাঠে সদ্যই বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়া নড়বড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র তিন রানে পরাজিত করেছে শক্তিশালী ভারত। ৩শর বেশি রান করেও মাত্র ৩ রানের জয় দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করলো সফরকারী ভারত। এতে ক্যারিবীয় বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া।
পোর্ট অব স্পেনে টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন ভারতের দুই ওপেনার অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান ও শুভমান গিল। ১০৫ বল ব্যাট করে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৯ রান তুলেন তারা।
মাত্র ৩৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান গিল। হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংস বড় করার পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ভুলে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হওয়া গিল ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৩ বলে ৬৪ রান করেন।
গিল ফিরলে, দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন ধাওয়ান ও শ্রেয়াস আইয়ার। দলকে বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করে দেন তারা। ৯৭ বলে ৯৪ রান তুলে এই জুটি। সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে আউট হন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ধাওয়ান। ৯৯ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯৭ রান করেন তিনি।
দলীয় ২১৩ রানে ধাওয়ানের আউটের পর ভারতের মিডল-অর্ডার ব্যাটাররা বড় ইনিংস খেলতে না পারলে ২৫২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় তারা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৪ রানে ফিরেন আইয়ার। মিডল-অর্ডারে সূর্যকুমার যাদব ১৩ ও সঞ্জু স্যামসন ১২ রানে থামেন।
৩৯ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট পতনে রান তোলায় ভাটা পড়ে ভারতের। তবে ষষ্ঠ উইকেটে দীপক হুদা ও অক্ষর প্যাটেল ৩৭ বলে ৪২ রান তুলে ভারতের রান ৩শর কাছে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩০৮ রান করে ভারত। হুদা ২৭ ও প্যাটেল ২১ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোতি-জোসেফ ২টি করে উইকেট নেন।
৩০৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম ওভারেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭ রান করে ফেরেন শাই হোপ । এরপর ভারতের বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছেন কাইল মায়ার্স ও শামারাহ ব্রুকস। সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের সামলাতে যেভাবে হিমশিম খেয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা, সেখানে মায়ার্স-ব্রুকসের দ্বিতীয় উইকেটে ১১৪ বলে ১১৭ রানের জুটি ছিল অসাধারন।
পরপর দুই ওভারে মায়ার্স ও ব্রুকসকে তুলে নিয়ে ভারতকে খেলায় ফেরার পথ দেখান পেসার শারদুল ঠাকুর। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬৮ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৫ রান করেন মায়ার্স। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৬ রান করেন ব্রুকস।
৫ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারের আউটের পর, দলের হাল ধরেন ব্রান্ডন কিং ও অধিনায়ক পুরান। রানের চাকা সচল রেখে দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন তারা। ৩৫ ওভার শেষে ১৮৯ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে কিং-পুরানের জুটি ভাঙ্গেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। ২টি ছক্কায় ২৬ বলে ২৫ রান করে আউট হন পুরান।
পরের ওভারে রোভম্যান পাওয়েলকে থামিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেন দেন স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহাল। চাহালের দ্বিতীয় শিকার হওয়া পাওয়েল ৬ রান করেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরিতে ২টি করে চার-ছক্কায় ৬৬ বলে ৫৪ রান করেন ব্রান্ডন কিং।
ষষ্ঠ উইকেটে কিংয়ের সাথে ৪৮ বলে ৫৬ ও সপ্তম উইকেটে রোমারিও শেফার্ডের সাথে ৩৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রান যোগ করেও, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের স্বাদ দিতে পারেননি আকিল হোসেন। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার ছিলো ক্যারিবীয়দের। প্রথম পাঁচ বলে ১০ রান পায় তারা। ফলে জিততে শেষ বলে ৫ রানের প্রয়োজন পড়ে স্বাগতিকদের। কিন্তু শেষ ডেলিভারি থেকে মাত্র ১ রান পায় তারা। এতে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩০৫ রান তুলে তীরে এসে তরি ডুবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
আকিল ৩২ ও শেফার্ড ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের সিরাজ-চাহাল ও শারদুল ২টি করে উইকেট নেন।