আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

জঙ্গিবাদ ভাড়া করা জিনিস : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জঙ্গিবাদ ভাড়া করা জিনিস : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ যে ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, তা সারা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যে কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এটা দেশ থেকে ভাড়া করা জিনিস।  যদিও উসকানি নিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

আজ রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এন্টি টেররিজম ইউনিটের ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখলাম অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়িতে, বাসা বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা। সেখান থেকে যখনই আমরা কন্ট্রোল করলাম তখনই শুরু হলো জঙ্গিবাদের নতুন অধ্যায়। আমরা দেখলাম ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজারকে হত্যা করা হলো। রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা, পঞ্চগড়ে ইস্কন মন্দিরের পুরোহিত, বান্দরবানের বৌদ্ধ মন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। শিয়া মসজিদে হামলা হলো। মসজিদে বোমা ফাটানোর চক্রান্ত হলো। এসব ঘটনার পেছনে ছিল বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হলো। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকলো। এরমধ্যেই হলি আর্টিজানের হামলা হলো। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল বাংলাদেশ শেষ হয়েছে গেছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেওয়ার যে চেষ্টা চলছে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিদের উদ্দেশ্য পালন করার একটা অপপ্রয়াস চলেছে। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ঈমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতা ও সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে, আমরা জঙ্গিবাদ চাই না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন,কোনো সময়ই ইসলাম জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামে বিনা কারণে গাছের ডাল ভাঙ্গারও বিধান নেই। সেখানে মানুষ হত্যার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও পরে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়। 

মন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থটি শুধু বাংলা নয়, সব ভাষাতেই সম্পাদিত করা হোক। তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বুঝতে পারবে ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, ইসলামকে বর্তমানে একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে পরিচিত করতে ইসরাইলসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। সেখানে মুসলমানদেরই কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণকে জানাতে হবে।

অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদক মন্ডলী সভাপতি শোলাকিয়া ঈদগাম ময়দানের প্রধান ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বইটি ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে যাতে জঙ্গিবাদ ছড়াতে না পারে।

এটিইউ প্রধান কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ অনেকে। 

 

বিপ্লব আহসান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জঙ্গিবাদ | ভাড়া | করা | জিনিস | | স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী