আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

প্রদীপ-চুমকির সশ্রম কারাদণ্ড

প্রদীপ-চুমকির সশ্রম কারাদণ্ড

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত প্রদীপ কুমার দাশের ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকির ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

আজ বুধবার (২৭ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ মামলার রায় দিয়েছেন।

দুদকের মামলার চট্টগ্রাম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২৬(২) ধারায় প্রদীপকে খালাস দেয়া হলেও তার স্ত্রী চুমকি কারণকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আর এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২৭(১) ধারায় দুজনকেই আট বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার আইনের ৫(২) ধারায় এ দম্পতিকে দুই বছর করে কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রায়ে ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনে প্রদীপ ও তার স্ত্রীকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামিই আদালতে হাজির ছিলেন। পরে তাদের সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

মামলায় দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, মামলায় আসামিদের পৃথক পৃথক ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে। একটি ধারায় সর্বোচ্চ ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত সব ধারার সাজা একত্রে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন। এতে সাজা বেশি হলেও একত্রে কার্যকর হওয়ার কারণে তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে সাজা ভোগ করতে হবে।

দুদকের এ আইনজীবী আরও বলেন, মামলার অভিযোগপত্রে থাকা ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে দুদকের পক্ষে ২৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন দুজন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকিকেও আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০২১ সালের  ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ দুর্নীতি মামলার চার্জ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপ এবং তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।

এর আগে গেলো বছর ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও চলতি বছরের ২৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। পরে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাবের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। এ ঘটনায় একই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন প্রদীপ। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এসি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রদীপচুমকির | সশ্রম | কারাদণ্ড