লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে ‘শহিদ সাগর’ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল অবরুদ্ধ করে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমসহ ৪২ জন কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্রাশফায়ার করে বেনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। শহিদদের স্মরণে দিবসটি ‘শহিদ সাগর’ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ওই পুকুরটির নামকরণ করা হয় ‘শহিদ সাগর’।
জানা যায় যে, ১৯৭১ সালে ৩১ মার্চ ভোরে মেজর রাজা আসলাম খান, হায়দার খান, সুবেদার গুলবাহার খানসহ আরও চারজন পালানো সময় ধারে ফেলে মুক্তিকামী ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালীন নিরাপত্তা পরিদর্শক হামিদুল হক চৌধুরি (বাবু)। তাদের মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমের বাংলোতে ২-৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ওইদিন মিলের গাড়িতে করে তাদের লালপুর শ্রী সুন্দরী স্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় এরপর হাজারও মানুষের মধ্যে মিলের তৎকালীন নিরাপত্তা পরিদর্শক হামিদুল হক চৌধুরি (বাবু) গুলি করে তাদের সবাইকে হত্যা করেন।
এ কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে প্রতিশোধ নিতে পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে ৫ মে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে অতর্কিত হামলা চালায় এবং মিলের সবগুলো প্রবেশপথের দরজা বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধারে নিয়ে গিয়ে গোপাল পুকুরের পাড়ের (বর্তমান শহিদ সাগর) সামনে তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে রাখে চোখ বেঁধে।
এ সময় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমকে ধমক দিয়ে বলে মেজর রাজা আসলামসহ তার সহকারীদের কারা হত্যা করেছে, তখন আনোয়ারুল আজিম বলেন, তোমরা আমাকে গুলি করে হত্যা করো কিন্তু মিলের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হত্যা করো না। পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তার কথা শোনেনি। পরে ওই পুকুরপাড়ে মিলের তৎকালীন প্রশাসক আনোয়ারুল আজিমসহ মুক্তিকামী ৪২ জন বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।
৪২ শহিদের স্মরণে স্বাধীনতার পরে ওই পুকুরটি ‘শহিদ সাগর’ নামকরণ করা হয় এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া শহিদদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শহিদ সাগর চত্বরে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ৫ মে মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমের স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার শহিদ সাগর চত্বরে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন। তার নাম অনুসারে গোপালপুর রেল স্টেশনের নামকরণ করা হয় আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন।
এএম/