বাংলাদেশ

৩৮ দিনে বজ্রপাত ৭৪ জনের মৃত্যু, বড় অংশই কৃষক

৩৮ দিনে বজ্রপাত ৭৪ জনের মৃত্যু, বড় অংশই কৃষক
দেশে গেলো এপ্রিল ও মে মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩৮ দিনে বজ্রপাতে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মারা যাওয়াদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম। বৃহস্পতিবার (৯ মে) সংগঠনটির গবেষণা সেলের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ২০ জন ও মহিলা ১১ জন। মে মাসের গেলো ৮ দিনে ৪৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৫ জনই কৃষক। চলতি মাসে একদিনেই মারা গেছেন ১১ জন এবং ৯ জন আহত হয়েছেন। খাগড়াছড়িতে মা-ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই সংগঠনটি কৃষকের জীবন রক্ষায় মাঠে কাজ করা কৃষকদের তিনটি পরামর্শ পালন করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি বজ্রপাত হলে কৃষকরা কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখবেন সেই কৌশলও বলে দিয়েছেন সংগঠনটির সদস্যরা। এ লক্ষ্যে গেলো শনিবার (৪ মে) থেকে এসএসটিএএফ’র একাধিক প্রতিনিধিদল মানিকগঞ্জের সিংগাইর, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও ঢাকার নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত প্রায় ৫০০ কৃষকের গ্রুপ করে বজ্রপাত থেকে নিজেদের জীবন রক্ষার কৌশল জানান। সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের প্রধান আব্দুল আলিম, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবী মো. শরিফুল ইসলাম। এ সময় কৃষকদের মাঝে কোমল পানি, শরবত ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে দ্রুত মাঠে মাঠে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানান। পাশাপাশি বছরের মার্চ থেকে জুন এই চার মাস কৃষকদের মাঝে বজ্রপাত সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করারও পরামর্শ দেন। কৃষকদের জন্য দেয়া পরামর্শগুলো হলো- ১. খোলা আকাশের নিচে থাকলে আকাশে কালো মেঘ দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ। ২. বৃষ্টি হলে গাছের নিচে অবস্থান না করা। ৩. খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় পায়ে জুতা পরিধান করা। মাঠে থাকা অবস্থায় হঠাৎ বজ্রপাত হলে নিচু হয়ে শুয়ে পড়া। গবেষণা সেলের প্রধান আব্দুল আলিম বলেন, খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় জুতা পায়ে রাখতে হবে, বজ্রপাত হলে নিচু হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। তবে আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলে মাঠে না থেকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেওয়ার কথাও বলা হয়। বৃষ্টি হলে গাছের নিচে অবস্থান করা বিপজ্জনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। ফোরামের সভাপতি ড. কবিরুল বাশার জানান, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুইটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গাছ, বিশেষ করে মাঠের উঁচু গাছ কেটে ফেলা। হাওর অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না। এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যেসব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে সেই মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠের গবাদি পশু। ফলে মানুষ মারা যায়, গবাদি পশুও মারা যায়। তিনি আরও বলেন, অনেকে মনে করেন ওই সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেয়া নিরাপদ, আসলে এটা ঠিক নয়। আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘরে বা পাকা স্থাপনার নিচে। তার মতে, সনাতন পদ্ধতিতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার লাগালে বজ্রপাতে হতাহতের হাত থেকে বাঁচা যায়। এতে খরচ কম। একটি বাড়িতে ১০ হাজার টাকা খরচ করেই লাগানো যায়। সরকার হাওর এবং খোলা জায়গায় এগুলো লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারে। কেএস/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ৩৮ | দিনে | বজ্রপাত | ৭৪ | জনের | মৃত্যু | বড় | অংশই | কৃষক