শেখ কামাল ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের রোল মডেল। তিনি একাধারে দেশের সেরা ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্রীড়াবিদ ছিলেন, তেমনি ছাত্র হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি মনেপ্রাণে দেশীয় সংস্কৃতি লালন এবং চর্চা করতেন তিনি। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামীকাল শুক্রবার (৫ আগস্ট) বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর জন্মবার্ষিকী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। এ উদযাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশ স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই তিনি আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফুটবলের পাশাপাশি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের অধীন তিনি হকি, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিস দলও গঠন করেন। তিনি খেলোয়াড়দেরকে আধুনিক পোশাক এবং ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহ করতেন। খেলাধুলায় উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তিনি স্বাধীন দেশে প্রথম ব্রিটিশ কোচ নিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের জেলাশাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি খেলোয়াড়দের স্বাবলম্বী করার নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তাঁদের অবসর ভাতা প্রদানেরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান নিয়ে ‘খেলোয়াড় কল্যাণ তহবিল’ গঠন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলা, সংগীত, অভিনয়, বির্তক, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি সংস্কৃতি জগতে অমর হয়ে আছেন। অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী মানুষটি একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, নির্লোভ, নিরহংকারী ও সদালাপী। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন অতি সাধারণ হয়ে। তিনি যেকোনো মানুষের প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট এক ঘোর অমানিশায় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকের দল জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই কালরাতে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে খুনিরা প্রথমেই হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালকে। কাপুরুষ হন্তারকদের দল শারীরিকভাবে শেখ কামালকে হত্যা করলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অভিযাত্রায় তাঁর প্রদর্শিত পথ, আদর্শ এবং দিক-নির্দেশনা আজও এক অনুকরণীয় মডেল।
হাসিনা বলেন, তাঁর ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে আমি তাকে গভীর মমতা এবং স্নেহপরশের মধ্য দিয়ে স্মরণ করছি। আমার বিশ্বাস, শেখ কামাল-এর আদর্শ ও প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে অচিরেই আমাদের ক্রীড়াঙ্গন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্যের শিখড়ে অধিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর অবদানকে স্মরণীয় রাখার লক্ষ্যে এবং তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ক্রীড়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদেরকে ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২২’ প্রদান করা হচ্ছে। এ মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে আবারও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী । তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করেন।