বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে নিয়ে হিসাব কষতে গেলে, সেটা খুব সুখকর ছিল না কখনোই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইতিহাসও ঠিক তেমনই। এই সংস্করণের যখন থেকে শুরু, সেই ২০০৭ সালের কথা। সেবারই পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাফল্যের হারে কিছুটা এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে লাল-সবুজ বাহীনির সুযোগ ছিল সুপার এইটে খেলার। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা। গ্রুপ পর্বের পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারলেও, সুপার এইট নিশ্চিত হয়ে যায় অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের দলের জন্য। অবশ্য এই রাউন্ডে সুবিধা করতে পারেনি তারা। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা- ৩ দলের কাছেই পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে।
অভিন্ন ফরম্যাটে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। ভারত ও আয়ারল্যান্ডের সাথে একই গ্রুপে ছিল দলটি। দুই প্রতিপক্ষের সাথেই হারের স্বাদ পেতে হয়েছে। ফলে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।
এর ঠিক পরের বছর ২০১০ সালে আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজন হয়, যায় আয়োজক দেশ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। দুই দলের কাছেই হেরে সেখান থেকেই বিদায় নেয় টিম টাইগার।
শ্রীলঙ্কার আয়োজনে ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সাথে এক গ্রুপে ছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানে হারের পর- আর কোনো সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের জন্য।
নিজেদের ঘরের মাটিতে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে জিতলেও, হংকং এর বিপক্ষে হেরে আলোচনার জন্ম দেয় মুশফিকুর রহিমের দল। সুযোগ হয়েছিল পরের রাউন্ডে যাওয়ার। যেখানে বাংলাদেশকে লড়তে হয়েছে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। পরে প্রতিটি ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে তারা।
ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে ওমান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে পরাজিত হয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। পরের রাউন্ডে যাওয়ার সৌভাগ্য হলেও, সেখানে বরাবরের মতোই নিউজিল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের সাথে পেরে ওঠেনি টাইগাররা। ভারত বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
বড় একটি বিরতি দিয়ে ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যেখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে খেলেছে বাংলাদেশ দল। আগের মতোই প্রথম রাউন্ডে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জয় তুলতে সক্ষম হয় তারা। অবশ্য হারতে হয়েছে স্কটল্যান্ডের সাথে।
পরের রাউন্ডে যায় বাংলাদেশ। যেখানে ৫ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ফলে প্রথম রাউন্ডের দুই জয়, সন্তুষ্টি- নিয়েই ঘরে ফেরে দল।
কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সরে যায়। যা পরবর্তীতে ২০২২ সালে আয়োজন হবে বলে সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ফলে ২০২১ সালের পর, আবার পরের বছরই বিশ্বকাপের আয়োজন হয়। এবার আয়োজক দেশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশকে বাছাই পর্বের কোনো বাঁধায় পড়তে হয়নি এই বিশ্বকাপে। মূল ১২ দলের প্রথম ৮ দল হিসেবে সুপার টুয়েলভ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে তারা। তবে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবুয়ে নিয়ে গড়া গ্রুপে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ী হয় সাকিব আল হাসানের দল।
বাকি ৩ ম্যাচ পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ ২০২২ শেষ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে শিরোপা কাঁধে তুলে নেয় ইংল্যান্ড। যারা এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন।
বরাবরের মতোই প্রত্যাশা নিয়ে আবারও বিশ্বকাপ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যার নবম আসরে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ লড়বে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে। এবার বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
অতীত বলছে, তেমন কোনো আশা নেই। তবুও দেশ ও দেশের ক্রিকেট নিয়ে সর্বোত্র প্রত্যাশার হাওয়া বইতেই থাকে। দর্শক ও সমর্থকরাও নিশ্চয়ই সেই হাওয়ার গন্ধ টের পান।
এম/এইচ