রেলওয়ের প্রায় ৫০০ টিকিটসহ কালোবাজারি চক্রের ১০ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আটকরা বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক টিকিট কিনে রেখেছিল। যেগুলো দুই থেকে তিন গুণ দামে বিক্রি করতো।
শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর জানান, টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের ধরতে গেলো বৃহস্পতিবার বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে ঢাকার কমলাপুর ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চক্রের ১০ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের (বেসরকারি ব্যবস্থাপায় চলাচলকারী ট্রেনের) বিক্রয় প্রতিনিধিও রয়েছেন।
আটকরা হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের মো. সোহেল রানা (২৭), রংপুরের মো. মাহবুবুর রহমান (২৮) ও মো. বকুল হোসেন (২৫), নাটোরের মো. শিপন আহমেদ (২৯), চুয়াডাঙ্গার মো. আরিফ (৩৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাদাত হোসেন (৩৫), জামালপুরের মো. মনির (২৫), নরসিংদীর শিপন চন্দ্র দাস (৩৫) ও মনির আহমেদ (৩০) এবং ফরিদপুরের মো. রাজা মোল্লা (২৬)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের প্রায় ৫০০ টিকেট ছাড়াও ১০টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ডসহ কালোবাজির বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর আরও জানান, আটকদের মধ্যে দুই ধরনের চক্র রয়েছে। এরমধ্যে একটি চক্র যখন অনলাইনে টিকিট আপলোড হয়, তখন ভুলা এনআইডি ও সিম ব্যবহার করে সেই টিকিটগুলো কেটে নেয়। পরে তারা ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে টিকিটের ছবি দিয়ে চড়া দামে সেগুলো বিক্রি করে। এ ক্ষেত্রে বিকাশ, রকেট কিংবা নগদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে বিভিন্নজনের কাছে অনলাইনে টিকিটের সফট কপি পাঠিয়ে দিতো চক্রটি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, এর বাইরেও একটি চক্র সশরীরে বিভিন্ন স্থানে টিকিট বিক্রি করতো। এরমধ্যে মৌচাক এলাকা থেকে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের মাধ্যমে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের চারজনের সঙ্গে যোগসাজশে তারা টিকিট কালোবাজারি করতো। এরপর র্যাব-১৩ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও দুইজনকে আটক করা হয়। তারা ঠাকুরগাঁওয়ে বসে ভুয়া এনআইডি ও সিমকার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কাটতো। তাদের একটি বড় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে যার মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি ও সিমের তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও টিকিটের চাহিদা নিয়ে আলোচনা হতো।
তিনি জানান, র্যাব-১৩ এর কাছে বিস্তারিত তথ্য জানার পর র্যাব-৩ এর সদস্যরা শুক্রবার ভোরে কমলাপুর-খিলগাঁও রেললাইন এলাকা থেকে মূল হোতা সোহেলকে আটক করতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে বিপুল ট্রেনের টিকিট ছাড়াও টিকিট বিক্রির আলামত, সিমকার্ডসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর জানান, টিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ বিক্রয়কারী সহযোগীদের মধ্যে কখনো নগদে আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাগ করতো বলে জানা গেছে। প্রতি মাসে জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতো চক্রটি। এভাবেই পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন দেশব্যাপী কালোবাজারি করে আসছিল তারা। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এএম/