মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের জনজীবন। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে খামারের মাছ ও হাঁস। আমন, আউশ, ইরি ধানি জমি পানির নীচে। নলকুপ নিমজ্জিত থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।বন্যায় পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন জেলার ৬ লক্ষাধিক মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুর পর্যন্ত জেলার প্রধান নদী সুরমা,কালনী,কুশিয়ারা ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বায়ান্ন টিভিকে নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মামুন হাওলাদার।
সরজমিনে দেখা যায়, বন্যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন, মসজিদ, মন্দির ও কবরস্থান প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতি ও ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। অনেক জায়গায় চুলা-নলকূপও ডুবেছে।
জানা যায়, প্রথম দিকে জেলার ৩টি উপজেলা বন্যা কবলিত হলেও এখন সারা জেলার ১২টি উপজেলা ঢলের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। হাওর এলাকায় দিনে মাঝে মাঝে বৃষ্টি বন্ধ হলেও মুহুর্তেই কালো হয়ে উঠে আকাশ। নামে অবিরাম বর্ষণ এবং বর্ষণের সাথে শুরু হয় গর্জন। একটানা ৫ দিন ধরে পাহাড়ী ঢলের সাথে লড়াই করে চলছেন বানভাসিরা।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ছাতক উপজেলায় ১৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘন্টায় ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের চেরীপুঞ্জিসহ সীমান্তে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো.রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বর্তমানে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ইতোমধ্যে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দসহ বন্টন করা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত মরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। জেলা প্রশাসন বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে
এদিকে, গেলো ১৯ জুন দিনব্যাপী সুনামগঞ্জ কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেওন্দ্রে শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ ৪ (সদর বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ড.মোহাম্মদ সাদিক ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
এছাড়া ছাতক উপজেলার জামুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়,দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে পুলিশ প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত রান্না করা খাবার বিতরণসহ ত্রাণসামগ্রী প্রদান করেছেন সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য এম মুহিবুর রহমান মানিক।
আই/এ