‘বাংলাদেশ ও ভারত শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে একটি ‘রূপকল্প ঘোষণা’ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ‘ডিজিটাল অংশীদারত্ব’ এবং ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতে আমরা দুপক্ষই সম্মত হয়েছি।’
শনিবার(২২ জুন) দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর যৌথ এক সংবাদ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। আমরা রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হওয়া ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে।’’
এসময় শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার এবং ভারতের জনগণের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসব বীর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আমাদের দিকনির্দেশনা দিতে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ সমর্থন করেছে। বাংলাদেশ ও ভারত ‘ডিজিটাল পার্টনারশিপ’ ও ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারত্বের’ জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সম্মত হয়েছে।’
চলতি বছরের ৭ জানুযারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফর শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরেই চীন সফর রয়েছে। তবে এখনও সফরের তারিখ চূড়ান্ত হয়নি।১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতে শেখ হাসিনার এটি দ্বিতীয় সফর। এর আগে, গত ৯ জুন নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বৈঠকে আমরা অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি। দুদেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে, সে ধারাবাহিকতায় আমরা ‘রূপকল্প ২০৪১’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুদেশই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়সহ উচ্চপর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান, দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আমিও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছিলাম। পরবর্তীকালে আমি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র আমন্ত্রিত অতিথি দেশের নেতা হিসেবে নয়াদিল্লিতে ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিই। ’
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এসময় আরও বলেন, ‘এখন আমি এই একই জুন মাসে অভূতপূর্ব দ্বিতীয়বারের মত নয়াদিল্লি সফর করছি। গত ৯ জুন অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার নবগঠিত মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আরও কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে নয়াদিল্লি সফর করি। এসবই আমাদের এই দুদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে।’
এর আগে, সকালে, দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদি। সেখানে শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস একটি দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে আজই ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল শুক্রবার দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমআর//