আর্কাইভ থেকে এশিয়া

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না ইরান: খামেনেয়ি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না ইরান: খামেনেয়ি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরোয়া ইরান করে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামনেয়ি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ধরে নিয়ে দেশের দায়িত্বশীলদের কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি। রোববার ফার্সি নববর্ষ নওরোজ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।

ইরানি গণমাধ্যম পার্স টুডে জানায়, ভাষণে খামেনেয়ি বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে কোনো অবস্থায় সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ওপর নির্ভরশীল করা যাবে না। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ভয়াবহ অপরাধ বলে উল্লেখ করেন দেশটির এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

তিনি আরও বলেন, যে দেশ পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে একটি দেশের দুই লাখ ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করতে পারে সে দেশের কাছে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত নয়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে আমাদের যুবসমাজ। অনেক পণ্য দেশেই তৈরি করে ইরানকে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছে তারা। এটি আমাদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা ছিল।

খামেনেয়ি বলেন, নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদের দুইটি করণীয় রয়েছে। প্রথমত, নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশের কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে পারি আপনারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন। তখন তারা আমাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী দাবি-দাওয়া চাপিয়ে দেবে। এই পথটি অপমানজনক ও অবমাননাকর। দ্বিতীয়ত, নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে সব অর্থনৈতিক প্রয়োজন দেশের ভেতরেই মেটানোর চেষ্টা করতে পারি। দ্বিতীয় পথ বেছে নিয়েছে ইরানি জনগণ। উদাহরণ হিসেবে, করোনাভাইরাসের প্রসঙ্গ বলা যায়। ভাইরাসটি ইরানে ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মাস্ক পর্যন্ত ছিল না। অথচ এখন আমরা নিজেরা করোনা মোকাবিলার সব পণ্য দেশেই তৈরি করছি। করোনার টিকা দেশেই তৈরি হয়েছে এবং জনগণ তা নিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে এবং অবমাননাকর পথ বেছে নেওয়া যাবে না।

পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি চেয়েছিলেন অবমাননাকরভাবে তার কাছে নতিস্বীকার করবে ইরান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করেনি বরং সেই ব্যক্তি চরম অপমানিত অবস্থায় বিদায় নিয়েছে। বিদায় নেওয়ার আগে অ্যামেরিকারও বদনাম করেছে। অন্যদিকে, গৌরবের সঙ্গে টিকে আছে ইরান। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট পূর্বসুরির পথ অনুসরণ করলে সেও একদিন হারিয়ে যাবে। কিন্তু গর্বভরে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে ইরান।

সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ি বলেন, ইরানের চূড়ান্ত নীতি হচ্ছে পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী পশ্চিমা দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। তারা এটি করলেই সমঝোতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে ইরান।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইরানের অর্থনীতিকে নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল না করার জন্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান খামেনেয়ি। তিনি বলেন, আপনাদের ধরে নিতে হবে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এটা করব, ওটা করব এ ধরনের কথা বলবেন না। যদির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

ইরানের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে জনগণকে ব্যাপকভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ইরানের জনগণকে নিজেদের মধ্যকার ঐক্য ও সংহতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

ইরানে আগামী জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মার্কিন | নিষেধাজ্ঞার | পরোয়া | করে | ইরান | খামেনেয়ি