আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান বিশিষ্ট ৩৯ জনের

ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান বিশিষ্ট ৩৯ জনের

ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতি করা যায়। প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন ৩৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এই ৩৯ জনের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা মনে করি, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে। আমরা আবারও একটি ব্যর্থ নির্বাচনের কবলে পড়ব, যা জাতি হিসেবে আমাদের চরম সংকটের দিকে ধাবিত করবে।

চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার একটি কারণ হলো, প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। এতে ‘ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল’ (ভিভিপিএটি) নেই, যার ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে তাই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনঃগণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশন কর্তৃক গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি। প্রসঙ্গত, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের ইভিএমে ভিভিপিএটি যুক্ত করা হয়।

ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়। বায়োমেট্রিক্সভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না, ফলে কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তাদের আঙুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেয়ার তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। যেকোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়। এছাড়া নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিতে পারেন। এছাড়া আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, ইভিএম ব্যবহার করার কারণে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।   

চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার আরেকটি কারণ হলো, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক থাকা এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি না হওয়া। সম্প্রতি কমিশনের ডাকা সংলাপে যে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছে তার মধ্যে ১৪টি দল এটি নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। এর মধ্যে ৯টি দল সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ যে ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছিল, তারাও ইভিএমের বিপক্ষে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপের সময়ে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। ইভিএমের ওপর অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের এ অবিশ্বাস আগামী নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার পথে একটি বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমাদের আশঙ্কা।

এছাড়া একাদশ নির্বাচনের আগে ইভিএম ক্রয়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ১৫০টি ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে নতুন মেশিন কেনায় অন্তত অর্ধ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ ধরনের বিপুল ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও ভোটারদের আস্থাহীনতার কারণে পৃথিবীর অনেক দেশই এখন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসছে। প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক উন্নত জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসও ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। পৃথিবীর ১৭৮টির মধ্যে বর্তমানে শুধু ১৩টি দেশ তাদের সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করছে।  

চিঠিতে স্বাক্ষর করা ৩৯ জন 
ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এম হাফিজউদ্দিন খান, ড. আকবর আলি খান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, আলী ইমাম মজুমদার, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ড. শাহদীন মালিক, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. শহিদুল আলম, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. আহসান মনসুর, আবদুল লতিফ মন্ডল, শামসুল হুদা, প্রকৌশলী বি ডি রহমতুল্লাহ, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লুবনা মরিয়ম, অধ্যাপক স্বপন আদনান, শারমিন মুরশিদ, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, আবু সাঈদ খান, কামাল আহমেদ, জাকির হোসেন, নূর খান লিটন, শিরিন হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাইফুর রহমান, ফারুক ফয়সাল, সঞ্জীব দ্রং, সালমা আলী, ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 

বিআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ইভিএম | ব্যবহার | করার | আহ্বান | বিশিষ্ট | ৩৯ | জনের