সোমবার(৮ জুলাই) চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২০টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন তথ্য জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
রোববার (৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী ৮ থেকে ১১ জুলাই বেইজিং সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে প্রায় ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ঘোষণাও করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. হাছান মাহমুদ আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিশেষ করে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকেই সবার নজর থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ এই সফর ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা ও সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি চীনকে বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে বলেন, তারা বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর বিষয়েও আলোচনা করেবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ৬ষ্ঠ ও ৯ম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পিপল টু পিপল কানেকটিভিটি প্রভৃতি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা আছে।
ড, হাছান মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন প্রদান করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী যারা:
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিবসহ অন্যান্য সচিব ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা চীনে যাবেন।
একনজরে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরসূচি
৮ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটযোগে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। একই দিন চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
৯ জুলাই: আগামী ৯ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী সাং-গ্রি-লা সার্কেলে ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। ওই দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। একই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জানাবেন।
১০ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এছাড়া, সরকারপ্রধান বেইজিং সফরের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ চীনা ভাষায় অনূদীত বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন।
১১ জুলাই: আগামী ১১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে বেইজিং ত্যাগ করবেন।
এমআর//