বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সঙ্কট সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষকে আবারও আহবান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় সোমবার(২৯ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এ আহবান জানান।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন, সহিংসতায় হতাহতসহ বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি এখন-টক অফ দ্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। এবিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়। সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এদিন হেফাজতে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের কাছ থেকে জোর করে বিবৃতি নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রশ্ন করেন খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী। তার প্রশ্নটি ছিলো, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখামাত্র গুলির নির্দেশ পাওয়ার পর সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যা নিরপরাধ তরুণ-তরুণীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করছে এবং ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কদের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছে। কবাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? হেফাজতে থাকার বিষয়টি সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় দেখানো হয়েছে যেখানে তাদের নির্যাতিত হওয়ার চিহ্ন দেখা গিয়েছে।’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যটেল বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কিত, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই আমরা বর্তমান পরিস্থিতির একটি স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা বিক্ষোভের স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা সারা বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সচেতন, কিন্তু আমরা ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবাগুলিতে সম্পূর্ণ এবং নিরবচ্ছিন্ন জনসাধারণের প্রবেশাধিকারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এটি আমাদের মার্কিন জনগণসহ বাংলাদেশের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার প্রবেশাধিকারে সক্ষম হবে।’
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরেকটি প্রশ্ন করে বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভের সঙ্গে একাধিক মার্কিন সিনেটরদের একাত্মতা প্রকাশ করার ব্যাপারে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মন্তব্য জানতে চান।
বেদান্ত প্যাটেলের কাছে তার প্রশ্নটি ছিলো. ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের অসংখ্য সদস্য এবং সিনেটরকে বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখেছি। কংগ্রেসম্যান লয়েড ডগেট বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ছাত্রবিক্ষোভকে 'জঙ্গি' বলে বর্ণনা করেছেন আর এই জঙ্গিরা হচ্ছে ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী শক্তি। তিনি আরও বলেছেন, হাসিনাই একমাত্র ‘জঙ্গি’যিনি শান্তিরক্ষী বাহিনীর যানবাহন ব্যবহার করা সৈন্যদের ছাত্রদের ওপর হামলা ও তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনকে অবশ্যই এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে কাজ করতে হবে বলেও তিনি জানান। এ ব্যপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই উপপ্রধান মুখপাত্র বলেন, ‘যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে চায়, আন্দোলন করতে চায় তাদের সব ধরণের প্রচেষ্টাকে অবশ্যই আমরা সমর্থন করি। বিষয়টি কংগ্রেসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে আমি নির্দিষ্ট চিঠিপত্রের ব্যাপারে কথা বলতে পারছি না। তবে মার্কিন কংগ্রেসে আমাদের সহকর্মীদের যেকোন প্রশ্নের জন্য আমরা অবশ্যই গভীরভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থাকি।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলা, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভসহ নানা বিষয় উঠে আসে।