আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণায় প্রাধান্য আগামীর রূপরেখা

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণায় প্রাধান্য আগামীর রূপরেখা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনে যোগ দিতে ২৬ মার্চ ২ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। 

মোদির সফরকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সফরকালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি যৌথ ঘোষণা বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। এতে দুই দেশের সম্পর্কের আগামীর রূপরেখা থাকবে। এর পাশাপাশি সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে ইতোমধ্যে একাধিক অগ্রবর্তী দল ঢাকায় পৌঁছেছে। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করছেন।

এছাড়া মোদি সফরকালে যেসব স্থানে যাবেন; ওই স্থানগুলো দুই দেশের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। তার মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটি চূড়ান্ত হয়েছে। এ তিনটি হলো, সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ব্যাপারে সহযোগিতা, পরিবেশগত সুরক্ষায় সহযোগিতা এবং দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা। এছাড়াও, সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ আরও দুটি এমওইউ সই করার বিষয়ে কাজ চলছে। 


এছাড়া ঢাকা ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এ ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভার নির্বাচন সামনে থাকায় সেখানকার নির্বাচন কমিশন এভাবে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় শুধু বাংলাদেশ সাইডে চালানোর মাধ্যমে ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন হবে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর এবং কোভিড-১৯ মহামারি কমলে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত নতুন এই ট্রেন সার্ভিস চলাচল করবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে আছে; যার একটি ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে এবং অপরটি খুলনা ও কলকাতার মধ্যে। এছাড়া, গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রোহনপুর এবং ভারতের সিঙ্গাবাদের মধ্যে মালবাহী ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে।

এদিকে মোদির সফরকালে বাংলাদেশ-ভারত স্বাধীনতা সড়কের উদ্বোধন হবে। মুক্তিযুদ্ধকালে এ সড়কে ১৭টি গাড়িবহর নিয়ে মুজিবনগরে এসে অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। মুজিবনগর থেকে নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত গেছে এ সড়ক। সফরকালে আশুগঞ্জে একটি সমাধিসৌধ উদ্বোধন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের স্মরণে এ সমাধিসৌধ। এছাড়াও, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কুটিবাড়িতে ভারতের অর্থায়নে যে সংস্কার কাজ হয়েছে; তারও উদ্বোধন করা হবে।

বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার পর তার একটা আনুষ্ঠানিকতা থাকবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পালন উপলক্ষ্যে ১৮ দেশে যৌথভাবে কর্মসূচি উদযাপন করবে বাংলাদেশ ও ভারত। এ ১৮ দেশের নাম ঘোষণা করা হবে। উদযাপনে কী কী কর্মসূচি থাকবে সেটিও ঘোষণা হবে। এছাড়াও, উদযাপনে আরও নতুন নতুন আইডিয়া ভারত জমা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। মোদি পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। মোদির সফরের আগে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান গুজরাট সফর করেন। গত বছরের মার্চে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে তার বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল হওয়ায় তখন তার সফরও বাতিল হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান ছিল। ভারতের অনেক সৈন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল প্রতিবেশী এই দেশ।

চলতি বছর বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। এসব কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সরকারের তরফে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মোদির সফরের পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী পদকে ভূষিত করায় ঢাকার তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘরের উদ্বোধন করবেন। যদিও কোনো কোনো গোষ্ঠী সফরের বিরোধিতাও করছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার সফরকালে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আয়োজন করছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্যে মোদি যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করবেন; সেগুলো ভারত থেকে আনা হচ্ছে।

দুইদিনের  সফরশেষে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

শুভ মাহফুজ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাংলাদেশভারত | যৌথ | ঘোষণায় | প্রাধান্য | আগামীর | রূপরেখা