বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়েছে। এতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখন পর্যন্ত ১৪ পুলিশসহ ৫৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করে। একে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব মরদেহ ঢামেকে আনা হয়।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন, রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩), ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রমিত উদ্দিন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী তোহিদুল ইসলাম। এছাড়া বাকি দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এছাড়া রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিব হাসান।
ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে বলে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইডি বিজয় বসাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একই জেলার রায়গঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় সাংবাদিকসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
ফেনীতে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচিতে সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আরও দেড় শতাধিক। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কাউন্সিলরসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন।
নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন।রোববার দুপুরে মাধবদী বাজার বড় মসজিদের অজুখানায় এ ঘটনা ঘটে।
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এ ঘটনায় আরও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭)।
মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইন শৃঙ্খলাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সময় গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ধারাবাহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।
অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে কুমিল্লার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দেবিদ্বার। সংঘর্ষে পুলিশসহ এক বাসচালক নিহত হয়েছেন।
মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে শহরের ঢাকা রোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
বরিশালে টুটুল চৌধুরী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বরিশাল মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ দিপু।
জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জেলা শহর। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিশাল সরকার (২৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন শতাধিক।
উল্লেখ্য, এছাড়া সারা দেশে ঘটা সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩০০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
আই/এ