আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ভেসে উঠলো আরও ৫টি মরদেহ, নিখোঁজ ৬৫

ভেসে উঠলো আরও ৫টি মরদেহ, নিখোঁজ ৬৫

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও আরও পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩০ জনে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে করতোয়ায় দুটি, দিনাজপুরের খানসামার আত্রাই নদীতে একটি এবং আরও দুটি মরদেহ ভেসে ওঠে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফি্সার তুষার কা‌ন্তি রায়।

তিনি জানান, সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের করতোয়ায় দুটি, দিনাজপুরের খানসামার আত্রাই নদীতে একটি এবং আরও দুটি মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে জানালে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

তুষার কা‌ন্তি রায় আরও বলেন, ভোর ৬টা থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহীর তিনটি ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে। অতীত অ‌ভিজ্ঞতা ও নদীর প্রবাহ দে‌খে ম‌নে হ‌চ্ছে, ভুক্ত‌ভোগী‌দের কেউ দুর্ঘটনাস্থ‌লে নেই। তারপরও প্রত্যেক ভুক্ত‌ভোগী‌কে উদ্ধা‌রে চেষ্টা অব্যাহত থাক‌বে।

এদিকে এ ঘটনায় জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের তথ্য মতে, প্রতিনিয়ত নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এখনও ৬৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় মৃত ২৫ জনের নাম ও পরিচয় জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও পাঁচ পুরুষ রয়েছেন। তাদের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা, দেবীগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলায়।

নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত মৃতরা হলেন- শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), পিয়ন্ত (২.৫), রুপালী ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী (৭০), জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সনেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), হাশেম আলী (৭০), বিলাস চন্দ্র (৪৫), শ্যfমলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫),  উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়শী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০) ও ব্রজেন্দ্রনাথ (৫৫)। তিনজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবে শিশু, নারীসহ ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহালয়া উপলক্ষে জেলার বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বোদার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় নদীর মাঝ পথে উল্টে যায় নৌকাটি। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে আসলেও ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং নৌকায় থাকা ৬৫ যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। পরে উল্টে যাওয়া সেই নৌকা উদ্ধার করে তীরে রাখেন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিস আসার পরে আশপাশে কোনো বড় নৌকা না পাওয়ায় দুর্ঘটনাকবলিত সেই নৌকা দিয়েই উদ্ধার কাজ শুরু করে ডুবুরি দল।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, এ জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ নৌকাডুবি এটি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিপঙ্কর রায়কে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবগুলো মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সৎকারের জন্য পরিবারগুলোকে দেয়া হয়েছে ২০ হাজার করে টাকা।

নৌকাডুবিতে হতাহতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬ নম্বর মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে।

তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা স্থানীয় ভূমি অফিসের সহকারী জাকির হোসেন বলেন, মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করা ও নিখোঁজদের সন্ধানের উদ্দেশ্যে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্বজনরা তাদের সন্ধানে এসে তথ্য দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৬৫ জন নিখোঁজ বলে জানা গেছে।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভেসে | উঠলো | আরও | ৫টি | মরদেহ | নিখোঁজ | ৬৫