২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন একদলীয় ও বিতর্কিত হয়েছে। বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, দলের সঙ্গে নয়, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। সম্প্রতি ভেঙে দেয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে, দলের মধ্যে নয়। ২৯৯ আসনে এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ভোট কয়েক ধাপে করতে হবে।
বিদায়ী সিইসি বলেন, ২০২৪ সালে একদলীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না। নির্বাচন এক দলের ভেতরেই হয়েছে। বহু দলের মধ্যে হয়নি। ভোটের পর বিজয়ী পেয়েছি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান কমিশনের অধীনে। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও প্রধানতম বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আহ্বান করা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।
তিনি বলেন, অতীতে কখনোই কোনো কমিশন নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেনি। নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সব দোষ বা দায়দায়িত্ব সবসময় কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সবসময় সব কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।
বিদায়ী সিইসি বলেন, দেশের প্রথম সাংবিধানিক সাধারণ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচন সামরিক শাসনামলে হয়েছে। ফলাফল নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৯১ এর নির্বাচন সম্মত রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, সূক্ষ্ম বা কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
তিনি বলেন. ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল। সে প্রশ্নে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধান মতে দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। পরে পদত্যাগ পত্রে সই করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায়, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশস পদত্যাগ করলে। সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকলেও মাত্র আড়াই বছরেই বিদায় নিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায়, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশস পদত্যাগ করলে। সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকলেও মাত্র আড়াই বছরেই বিদায় নিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জেএইচ