জাতীয়

ড. ইউনূসের সঙ্গে মঞ্চে ওঠা কে এই জাহিন রাজিন?

বায়ান্ন প্রতিবেদন

নিউইয়র্কে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আয়োজিত 'ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ' অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশে থাকা এক তরুণকে নিয়ে চলছে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে তাকে ‘স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ’ সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন। ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তাকে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা গেছে। ওই তরুণকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহফুজ আলম।

'ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ' আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তার বক্তব্যে তরুণদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা জানান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের মঞ্চে ডাকেন। 

ড. ইউনূসের আহবানে তখন মঞ্চে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বর্তমানে তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি ও অপর এক তরুণ। প্রথম দুজনের ড. ইউনূসের সফরসঙ্গীর তালিকায় থাকলেও, তৃতীয়জনের নাম ছিল না। 

এই তিনজন মঞ্চে গিয়ে বিল ক্লিনটনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ড. ইউনূসের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। 

অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার হয়, ফলে  তৃতীয় ওই তরুণের পরিচয় এবং মঞ্চে ওঠা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। সমালোচনায় প্রশ্ন করা হয়, এই তরুণ কীভাবে আন্দোলনের একজন!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই তরুণকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়া একটি ছবিতে ওই তরুণকে দেখা গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, তৃতীয় ওই তরুণ জাহিন রোহান রাজিন। হাইড্রোকো প্লাস এর প্রতিষ্ঠাতা। 

তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী মাহফুজ আলম বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের (সিজিআই) অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওঠা ওই তৃতীয় তরুণকে অনুপ্রবেশকারী বা 'ইনট্রুডার' বলে উল্লেখ করেছেন। 

মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: "সিজিআই ইভেন্টের ওই ব্যক্তি ছিলেন একজন অনুপ্রবেশকারী এবং প্রতারণামূলক উদ্দেশ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমি তার এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি নিজস্ব উদ্যোগে ইভেন্টে অংশ নেন এবং আমরা যারা প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলাম, তার উপস্থিতি কিংবা উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তিনি আমাদের কারো সাথেই যোগাযোগ করেননি। যখন স্যার আমাদের মঞ্চে ডাকেন, তিনি দ্রুত উঠে আমাদের আগেই মঞ্চের দিকে ছুটে যান। যদিও তার প্রতি সন্দেহ ছিল, আমি তাকে মঞ্চে উঠতে বাধা দিতে পারিনি। তবে বিশ্বনেতা ও বিশিষ্টজনদের মাঝে আমি অসহায় ছিলাম। মনে হচ্ছে, এটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত ধ্বংসাত্মক কাজ ছিল। এই ঘটনার জন্য আমি আন্দোলনের নেতাকর্মী, সমন্বয়কারী এবং গণজাগরণের যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি তাকে প্রতিহত করতে পারিনি এবং তার এই বিশ্বাসঘাতকতার কাজ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা ভবিষ্যতে গণজাগরণের প্রতিনিধিত্ব আরও সতর্কতার সাথে করবো এবং এই ধরনের অনুপ্রবেশকারী ও ৫ আগস্টের বিপ্লবের ষড়যন্ত্রকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনব।"

মঞ্চে ওঠার বিষয়ে জাহিন গণমাধ্যমকে বলেন, 'ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমি পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। যখন ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ডাকলেন তখন আমি দর্শকসারি থেকে করতালি দিচ্ছিলাম। আমার পাশে বসেছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন যে, তুমি তো বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমিও কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি মাহফুজ ভাইদের পেছন পেছন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি প্রফেসর ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস আসবেন শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম যে তার কাছাকাছি যাওয়ার একটা সুযোগ হবে।'

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহিন বলেন, '২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে একটা কাজ করে আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাস। ওই কাজের জন্যই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল। সেসময় ছবিটি তোলা হয়। ছবিটা কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলো, তাও আমি জানি না।'

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আন্দোলনের সময় আমি দেশেই ছিলাম। আমি নিজেই জেন-জি। সুতরাং এই আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না।'

 

এসি//

 

 

 

 

 

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ড. ইউনূস