সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান করার বিষয়টি আবারও মূল ধারার গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও ঘুরপাক খাচ্ছে। শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? এনিয়ে কৌতূহল-নানা গুঞ্জনতো আছেই। বিশেষ করে ভিসা ছাড়া ৪৫ দিন পার হওয়ার পর তিনি এখন কোন স্ট্যাটাসে ভারতে রয়েছেন, নাকি রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে-এসব প্রশ্ন এখন বেশি আলোচিত হচ্ছে। নতুন করে সংবাদ রটেছে-শিগগিরই ভারত ছাড়ছেন শেখ হাসিনা,তার সম্ভাব্য গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি দেশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে বাংলাদেশে ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন, কোন স্ট্যাটাসে আছেন-অন্য কোনো দেশে যাবেন নাকি ভারতেই থেকে যাবেন-এসব বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। শেখ হাসিনার ভারতে পৌঁছানোর পরের দিনই ভারতের লোকসভায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, পদত্যাগ ও দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই শেখ হাসিনা স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি প্রার্থণা করেন।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। এ ধরনের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়া ভারতে ৪৫ দিন বৈধভাবে থাকতে পারেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, ডিপ্লোমেটিক ও অফিশিয়াল বা সার্ভিস পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা যাতে বিনা ভিসায় একে অন্যের দেশে থাকতে পারেন, সে জন্য মোট ১০০টি দেশের সঙ্গে ভারতের একই ধরনের সমঝোতা আছে। শুধু ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টধারী ব্যক্তিদের জন্য অনুরূপ সমঝোতা আছে আরও ৩৪টি দেশের সঙ্গে। বিনা ভিসায় থাকার এই মেয়াদ কোনো দেশের ক্ষেত্রে ৯০ দিন। কোথাও ৪৫, ৩০ বা ১৪ দিন। তবে চুক্তি অনুযায়ি, ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ৪৫ দিন।
তবে এরইমধ্যে ভারতে শেখ হাসিনা প্রায় ২ মাস ধরে অবস্থান করছেন। কূটনৈতিক পাসপোর্টে তার বৈধভাবে অবস্থানের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। একারণেই প্রশ্ন উঠেছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে থাকছেন কোন মর্যাদায়? তবে সেটি রাজনৈতিক আশ্রয় না শরণার্থী, তা নিয়ে নীরব ঢাকা-দিল্লি। ভারত শরণার্থী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেনি। তাই শেখ হাসিনা শরণার্থী হিসাবে দেশটিতে আশ্রয় পারেন না। তবে দিল্লির ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ মোতাবেক শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। মানবিক কারণ বিবেচনায় তাকে আশ্রয় দিয়েছে নয়া দিল্লি এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
এরইমধ্যে খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র নাকি ভারতের কাছে জানতে চেয়েছে, শেখ হাসিনা কীভাবে, কোন ব্যবস্থায় দিল্লিতে অবস্থান করছেন? জবাবে ভারত নাকি বলেছে, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি দেশে তিনি চলে যাবেন। এই খবর ঢাকার সরকারি মহলকেও জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বা ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ার একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বললেও বায়ান্ন টিভিকে কোনো সূত্রই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওই আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিষয়সহ নানা ইস্যু আলোচনায় স্থান পায়। এছাড়া, গত ১ অক্টোবর ওয়াশিংটনের কার্নেগি এনডাউনমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’র একটি অনুষ্ঠানে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন- ওয়াশিংটন সফরের সময় যেকোনো একটি ইভেন্টে হয়তো শেখ হাসিনা কোন স্ট্যাটাসে ভারতে অবস্থান করছে তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং শেখ হাসিনা শিগগির ভারত ছাড়ছেন-একথাটিই বলেছেন এস জয়শঙ্কর।
তবে বিশ্লেষকদের বেশিরভাগই মনে করছেন, ভারত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রত্যেকটি আলাদা ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে শেখ হাসিনাকে ভারত যেভাবে আশ্রয় দিয়েছিলো-এবারেও হয়তো মানবিক কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে যাচ্ছে ভারত।
এমআর