ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা মারা গেছেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হলো দেশের শিল্পক্ষেত্রের একটি অধ্যায়। প্রয়াত রতন সম্পর্কে এই ১০টি তথ্য জানলে শ্রদ্ধা অনেকটাই বেড়ে যাবে। তার সম্পর্কে এই ১০টি তথ্য অনেকেই জানেন না।
১. টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটা হলেন রতন টাটার প্রপিতামহ। ১৯৪৮ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তাই তিনি তার ঠাকুমা, নওয়াজবাই টাটার কাছে বেড়ে ওঠেন।
২. রতন টাটা অবিবাহিত। মজার ব্যাপার হলো, চার বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার প্রায় বিয়ে হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু নানা কারণে বিয়ে করতে পারেননি। তিনি একবার বলেছিলেন যে লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করার সময়ে তিনি প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের কারণে মেয়েটির বাবা-মা তাকে ভারতে পাঠানোর বিরোধিতা করেন। এরপর আর বিয়ে করেননি তিনি।
৩. রতন টাটা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে পড়াশোনা করেন, তারপরে ক্যাথেড্রাল এবং জন কনন স্কুল এবং সিমলার বিশপ কটন স্কুল সিমলায় পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল থেকে ডিপ্লোমা লাভ করেন।
৪. রতন টাটা ১৯৬১ সালে টাটা গ্রুপে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং তার প্রথম কাজ ছিল টাটা স্টিলের শপ ফ্লোর পরিচালনা করা। পরে তিনি পড়াশোনা শেষ করতে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে যান। রতন টাটা কর্নেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ আর্কিটেকচারেরও প্রাক্তন ছাত্র।
৫. ২০০৪ সালে টিসিএস প্রতিষ্ঠা করেন রতন টাটা। তার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোরাস, ব্রিটিশ মোটরগাড়ি সংস্থা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার এবং ব্রিটিশ চা সংস্থা টেটলির সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা টাটা কোম্পানিকে সারা বিশ্বের নজরে নিয়ে আসে।
৬. ২০০৯ সালে তিনি ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা গাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন এবং ১ লাখ টাকা দামের টাটা ন্যানো বাজারে নিয়ে এসেছিলেন।
৭. তিনি তার সেবামূলক কাজের জন্যও পরিচিত। তার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ ভারতের স্নাতক শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ মিলিয়ন ডলারের টাটা স্কলারশিপ ফান্ডের ব্যবস্থা
৮. ২০১০ সালে, টাটা গ্রুপ হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (এইচবিএস)-এ একটি এগজিকিউটিভ সেন্টার নির্মাণের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়, যেখানে তিনি তার স্নাতক প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
৯. ২০১৪ সালে, টাটা গ্রুপ আইআইটি-বোম্বেকে ৯৫ কোটি টাকা অনুদান দেয় এবং গরিব মানুষ এবং সম্প্রদায়ের প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তির বিকাশের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্দেশ্যে টাটা সেন্টার ফর টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (টিসিটিডি) গঠন করা হয়।
১০. জামশেদজি টাটার সময় থেকেই বোম্বে হাউসে বর্ষাকালে রাস্তার কুকুরদের ভেতরে ঢুকতে দেয়ার ইতিহাস রয়েছে। সেই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছেন রতন টাটা। তার বোম্বে হাউসের সদর দপ্তরে সাম্প্রতিক সংস্কারের পরে রাস্তার কুকুরদের জন্য একটি কেনেল রয়েছে। এই কেনেলে রাস্তার কুকুরদের জন্য খাবার, পানি, খেলনা দেয়া হয়। সেখানে একটি খেলার জায়গাও রয়েছে তাদের জন্য।
জেএইচ