জাতীয়

যে ‘মিশন’ নিয়ে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার

মিজানুর রহমান খান

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ও মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান ভলকার তুর্ক ছবি: সংগৃহীত

সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর ঢাকা সফরে আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ও মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান ভলকার তুর্ক।পররাষ্ট্র মন্ত্র্রণালয়ের একটি সূত্র বায়ান্ন টিভিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মানবাধিকার হাইকমিশনার হিসেবে এটিই হবে ভলকার তুর্কের প্রথম ঢাকা সফর। একাধিক কারণে ভলকার তুর্কের ঢাকা সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নর্থ অমেরিকা উইংয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বায়ান্ন টিভিকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে সাইড লাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন ভলকার তুর্ক। ওই সাক্ষাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আলোচনায় স্থান পায়। এবার ঢাকা সফরে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিস থেকে নিযুক্ত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন ভলকার তুর্ক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নর্থ অমেরিকা ইউংয়ের ওই সিনিয়র কর্মকর্তা আরও জানান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের একটি কার্যালয় স্থাপন করতে চায় জাতিসংঘ।এজন্য,সংস্থাটির মানবাধিকার হাইকমিশনার ও মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান ভলকার তুর্কের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বরতী সরকারের সঙ্গে বড় ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের ওয়েবসাইট অনুযায়ি, বিশ্বের ১৯টি দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস রয়েছে। এসব অফিস প্রধানত মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ, সুরক্ষা, গবেষণা, সরকার, জাতীয় কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজ, ভুক্তভোগী এবং অন্য প্রাসঙ্গিক সহযোগীদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান; সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জনসাধারণের প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সহায়তার ব্যবস্থা করে থাকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, সাধারণভাবে অফিস খোলার জন্য যে দেশগুলোর সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়, সেখানে যেকোনো স্থানে মানবাধিকার অফিসের অবারিত প্রবেশাধিকারের বিষয়টি উল্লেখ থাকে। এ ছাড়া অফিস চালানোর খরচ সংগ্রহ করা হয় অনুদানের মাধ্যমে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে যদি অফিস খোলার অনুমতি দেয়, তবে সেটি হবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ২০তম অফিস।

ভলকার তুর্ক এর অগে ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ঢলের সময় বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)এর অ‍্যাসিস্ট‍্যান্ট হাইকমিশনার ফর প্রটেকশন হিসেবে।বাংলাদেশে আসার আগে তিনদিনের সফর করেছিলেন মিয়ানমারে।এবার আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ও মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান

প্রসঙ্গত,বাংলোদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলার সময় ভলকার তুর্ক একাধিক বিবৃতি দিয়ে মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার  ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায় বিচার ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন বা বিবৃতি দিয়েছেন। গেলো ১৬ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচআরসি) প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক বার্তায় হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’

এরও আগে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৭ জানুযারি) পর  ‘নির্বাচনের পরিবেশ সহিংসতা এবং বিরোধীপ্রার্থী ও সমর্থকদের দমনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ভলকার তুর্ক। নির্বাচনের  পরের  দিন (৮ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভোটের কয়েক মাস আগে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক কিংবা ভয় দেখানো হয়েছে। এ ধরনের কৌশল সত্যিই প্রকৃত প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়।

ওই বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশে গত ২৮ অক্টোবর থেকে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যাদের মধ্যে প্রধান বিরোধী দলের নেতারা রয়েছেন। গত দুই মাসে অন্তত ১০ জন বিরোধী সমর্থক হেফাজতে মারা গেছে অথবা নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে আটকের পর সম্ভাব্য নির্যাতন বা কঠোর অবস্থার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মানবাধিকারকর্মীকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে এবং কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এছাড়া কয়েক ডজন সন্দেহভাজন জোরপূর্বক গুমের ঘটনার কথা জানা গেছে; যার বেশিরভাগই গত নভেম্বরে ঘটেছে।

ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এসব ঘটনা অবশ্যই স্বাধীনভাবে তদন্ত করা উচিত এবং দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় এবং নির্বাচনের দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অনিয়মের ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করা উচিত

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভলকার তুর্ক