রেললাইনের মাঝখানে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকে। ট্রেনের চলাচলকে ব্যাহত না করে এই ফাঁকা জায়গায় স্বাভাবিক আকারের সৌর প্যানেল বসানো সম্ভব। সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিতে যাচ্ছে এনার্জি স্টার্টআপ কোম্পানি সান-ওয়েজ। এরইমধ্যে সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল অফিস অফ ট্রান্সপোর্ট-এফওটি রেললাইনে সোলার প্যানেল বসানোর অনুমতি দিয়েছে।
আসছে ২০২৫ সালে রেললাইনের ওপর এই সিস্টেমটি বসানোর পরিকল্পনা করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সানওয়েজ। ক্যান্টন অফ নিউচেটেলের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি-ট্রান্সএন পরিচালিত ২২১টি রেলওয়ের ১০০-মি রৈখিক অংশে সোলার প্যানেল বসতে যাচ্ছে। এক-মিটার চওড়া প্যানেলগুলো সরাসরি রেললাইনের ফাঁকে বসানোর পর রেললাইনের পাতগুলোর ওপর পিস্টন ব্যবহার করে সেগুলো লাগিয়ে দেওয়া হবে।
সুইস কোম্পানি শয়েশজারের তৈরি একটি ট্রেনের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি প্যানেলগুলো পাতের ওপর বসানো হবে। সান-ওয়েজের মতে কার্পেট যেভাবে খোলা হয়, ঠিক সেভাবে মুড়িয়ে রাখা প্যানেলগুলো খুলে রেললাইনের পাতের ওপর বসিয়ে দেওয়ার কাজ করবে ট্রেনটি।
প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলট সিস্টেমটি ৪৮টি প্যানেলের উপর নির্ভর করবে। যাদের প্রত্যেকটির আউটপুট ৩৮০ ওয়াট এবং তাদের সম্মিলিত ক্ষমতা হবে ১৮ কিলোওয়াট। ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৯২০ মার্কিন ডলার বা প্রায় আট কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে চলা সৌরপ্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে পাঠিয়ে আবাসিক কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য আরও বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সানওয়েজ।
রেললাইনের ওপর সৌরপ্যানেল বসানোর আইডিয়াটি অভিনব কিছু নয়। এর আগে ইতালির গ্রিন রেইল এবং যুক্তরাজ্যের ব্যাংকসেট এনার্জি নামের দুইটি প্রতিষ্ঠানও পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে। তবে সান-ওয়েজের এই প্রকল্পের নতুনত্ব হলো এর সোলার প্যানেল আলাদা করার ব্যবস্থা, যেটিকে তারা পেটেন্ট করে নিয়েছে।
সান ওয়েজের দাবি, বিশাল ফাঁকা জায়গার অভাবের কারণে বড় সৌরপ্যানেল বসানো সম্ভব হয় না। তাই রেলপথের ওপর সৌরপ্যানেল বসানো গেলে পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। এমনকি আলাদা করে কারোর চোখেও পড়বে না।
সুইজ ফেডারেল রেলওয়েজের তথ্যমতে, দেশটিতে মোট পাঁচ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দের্ঘ্যের রেলপথ আছে। টানেল এবং কম সূর্যের আলো পৌঁছায় এমন জায়গা বাদ দিয়েও পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া এমন রেলপথের আয়তন প্রায় ৭৬০টি ফুটবল মাঠের সমান।সানওয়েজের মতে,এর প্রায় সব অংশেই সৌরপ্যানেল বসানো সম্ভব। রেলপথে সৌরপ্যানেল বসানো হলে বছরে ১ টেরাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে, যা সুইজারল্যান্ডের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার দুই শতাংশ।
এখন সান ওয়েজ কোম্পানির লক্ষ্য, ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও তাদের প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া, যার মধ্যে রয়েছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ায়ও। সানওয়েজের সহ-প্রতিষ্ঠঅতা ব্যাপ্টিস্ট ড্যানিশার্ট জানান, পুরো বিশ্বে দশ লাখ কিলোমিটারেরও বেশি রেলপথ রয়েছে। এর অর্ধেক পথে সানওয়েজের প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব।
তবে আধুণিক এই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ রেইলওয়েজ। সংস্থাটির আশঙ্কা প্যানেলগুলো রেললাইনে ক্ষুদ্রাকার ফাটল তৈরি করতে পারে, বনে আগুন ধরে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এমনকি সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে রেলচালককে সমস্যায় ফেলতে পারে। তবে সৌরপ্যানেল সূর্যের আলো যেন প্রতিফলিত না করতে পারে সেজন্য ভিন্নভাবে তাদের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সান-ওয়েজ।
এমআর//