আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

কমলা হ্যারিসের হারে অন্তর্কোন্দল ডেমোক্র্যাট শিবিরে

বায়ান্ন আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ছবি: বিবিসি(ফাইল)

ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের আশা জাগিয়ে প্রচারে নেমেছিলেন কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্টি হতো নতুন ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ প্রথমবারের মতো পেতেন কোনো নারী প্রেসিডেন্ট। তবে ভারতীয়-আফ্রিকান বংশোদ্ভূত প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস রচনা করা হল না তাঁর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ডের ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি কমলার এই পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারণ খোঁজা হচ্ছে কেন আশা জাগিয়েও ভারতে শিকড় থাকা কমলাকে হারতে হল?

ফ্রান্সের লে মন্ডে, ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি, ভোরতের হিন্দুস্তান টাইমসসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে কমলার হারের বেশ কয়েকটি কারণ।  কমলা হ্যারিসের হারের সুরতহাল করা শুরু করেছেন ডেমোক্র্যাট শিবিরের নেতাকর্মীরাও। কমলার হারের নেপথ্যে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নাম।  তবে কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে দলটিতে  দেখা দিয়েছে অন্তর্কোন্দল।

চলতি বছরের শুরুতে ৮২ বছরের জো বাইডেনকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন ডেমোক্র্যাটরা তবে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা, গেলো ২৭ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে ব্যর্থ হলেও কিছুতেই প্রার্থীপদ ছাড়তে রাজি ছিলেন না বাইডেন পরে দলের ভেতরে প্রচণ্ড সমালোচনা শুরু হলে প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ান।  বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল পেলোসির। অবশেষে বাইডেন না কমলা দন্দ্বে ভুগে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রার্থী নিশ্চিত হয় ডেমোক্র্যাটদের দলের এই সিদ্ধান্ত নিতে  দেরি হওয়াটা  কমলার হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাট শিবিরের বেশিরভাগ নেতাকর্মী।

কমলার পরাজয়ের জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন,

যদি বাইডেন নির্বাচন থেকে আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করতে পারত। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে কমলা জিততেন বলে মনে করেন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক এই স্পিকার।

রিপাবলিকান ট্রাম্পের কাছে কমলার হারের জন্য পেলোসি ছাড়াও অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। আর কমলা হ্যারিসের উপদেষ্টারাও হারের জন্য বাইডেনকে দায়ী করছেন। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা বলছেন, নির্বাচনের প্রচারে কোনো কমতি রাখা হয়নি। কিন্তু প্রচারের জন্য সময় পাওয়া গেছে অল্প। বাইডেন যদি আরও আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য বেশি সময় পাওয়া যেত। এই উপদেষ্টাদের একজন বলেন, ‘গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও ডেমোক্র্যাটদের হারের নেপথ্যে একমাত্র কারণ বাইডেন।’

কমলা ‘অজুহাত খুঁজছেন’

তবে বাইডেন-ঘনিষ্ঠরা বলছেন অন্য কথা।  পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ও ডেমোক্র্যাট নেতা জন ফেটারম্যান মনে করেন, বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকারীরাই নির্বাচনে হারের জন্য দায়ী। তিনি বলেন, ‘তাঁরা বাইডেনকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। তাঁদের চাওয়া অনুযায়ী নির্বাচনও হয়েছে। এখন নির্বাচনের ফলাফল যেটা এসেছে আর দলের যে বিপর্যয় হয়েছে, তা মেনে নেওয়াই যথোপযুক্ত।’

পশ্চিম এশিয়া ইস্যুতে বাইডেন-কমলার অবস্থান নেওয়াও পরাজয়ের কারণ মনে করেন দলের অনেকে। ইজরায়েল বনাম হামাসের যুদ্ধে জো বাইডেন সরকারের অবস্থান নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছেন অভিবাসী মার্কিন নাগরিকরা লেবাননে হামলা চালানোর পরও বাইডেন এবং কমলা ইজরায়েলের পাশে ছিলেন বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এর ফলে আরব-আমেরিকান, মুসলিম ভোটাররাও কমলাকে ভোট দেননি এমনটাই মনে করছেন নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান ও দলটির নেতা টম সুওজি। তাঁর মতে, নির্বাচনী প্রচারে রিপাবলিকানরা আক্রমণাত্মক অবস্থান নিলেও এর বিপরীতে পাল্টা আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে পারেননি তাঁরা।  কংগ্রেসম্যান রিচি তোরেস মনে করেন, দলের ভুল নীতির কারণে সংখ্যালঘু অনেক ভোট হারাতে হয়েছে।

এমআর//