অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসে কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়ক ছেড়েছেন মাওলানা সাদপন্থীরা।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) তাবলিগ জামাতের দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বি মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আসতে দেয়ার দাবিতে ওই সড়কে অবস্থান করেন সাদপন্থীরা। এতে ওই এলাকার সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় এবং চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
জানা গেছে, আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের উপস্থিতি চান তার অনুসরারীরা। তবে মাওলানা সাদের আসার অনুমতি না মেলায় সকালে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে সড়কে অবস্থান নেন তারা।
সড়কে অবস্থান নেয়া তাবলীগ জামাতের একজন মুরুব্বি সকাল নয়টার দিকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তারা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে তাদের ১০ জনের একটি জামাত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যাবেন।
তিনি আরও বলেন, মওলানা সাদ সাহেবকে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমরা যাচ্ছি। গেলো সাত আট বছর যাবত আমাদের ওপর অনেক জুলুম অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের আমীরের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে উনাকে বাংলাদেশ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। আমরা আর কোনো অবস্থাতেই এটা মানতে রাজি না। উনার ব্যাপারে কোনো প্রকার বাধা বিপত্তি আমরা আর মানতে রাজি না।
এদিকে আগামী বছর দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ও কাদের অধীনে হবে তা চুড়ান্ত করা হয়েছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি শুরায়ী নেজামের অধীনে হবে এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সাদপন্থীদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (১৭ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একটি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সভাপতি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন যে, বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিশ্ব ইজতেমা দীর্ধদিন ধরে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনকে আরও সুন্দর ও মহিমান্বিত করতে হবে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়েরের অনুসারী, শুরায়ী নেজাম) আয়োজন করবেন ও আগামী ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (মাওলানা সাদের অনুসারীরা) আয়োজন করবেন।
বিশ্ব ইজতেমার মাঠ হস্তান্তর প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথম পর্বের আয়োজনকারীরা তাদের আয়োজন শেষে ইজতেমার মাঠ বিভাগীয় কমিশনার ঢাকার নেতৃত্বে গঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটিকে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে বুঝিয়ে দিবেন। আর দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনকারীরা ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উক্ত কমিটির থেকে ইজতেমার মাঠ বুঝে নিবেন এবং ইজতেমা শেষে ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কমিটির কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন।
এছাড়াও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি, আইন- শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক কার্যক্রম তদারকি সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয় বলেও জানা যায় বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.)-এর ছেলে মাওলানা হারুন (রাহ.)। তারই ছেলে হলেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী। দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরুব্বি সাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি তার এ সব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে বিতর্কিত হয়েছেন। এসব বিষয়ে নিয়ে বর্তমানে দুদলে বিভক্ত তাবলিগ জামায়াত।
এসি//