সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয় বলে জানিয়েছেন, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা.শফিকুর রহমান।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নেন আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায়।
জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা সর্বজনপরিচিত। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, “সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি। এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারত-সহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চাই ভারতও একইরকম সাড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহাবস্থানের ভিত্তিতে”।
জামায়াতে ইসলামীকে দেখা হয় কট্টর ইসলামি সংস্থা হিসাবে, অন্যান্য ইসলামি রাষ্ট্রে যে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’ রয়েছে তার অংশ হিসাবে। নিজেদের সংগঠনকে কী ভাবে দেখেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে ‘জামায়াতে ইসলামী কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন এটা একেবারেই অসত্য’ জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, “ জামায়াত একটি আধুনিক, উদার এবং গণতান্ত্রিক দল, যার ভিত্তি ইসলামিক আদর্শ। আরও একটি কথা মনে করিয়ে দিই, আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। বিশ্বের অন্য কোনও রাজনৈতিক সংস্থায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই”।
বিএনপি’র একটি অংশ জামায়াতের কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে-সাংবাদিক অগ্নি রায়ের এমন প্রশ্নে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ কট্টরপন্থী মনোভাব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা অস্পষ্ট। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে জোরালো ভাবে আবারও বলতে চাই, জামায়াত একটি আধুনিক, উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক দল, যার আদর্শ ইসলামের। আমরা সর্বদাই যুক্তিগ্রাহ্য, বাস্তবসম্মত এবং মধ্যপন্থা নিয়ে রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, তারা আমাদের আধুনিক মনোভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন”।
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে।প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতের নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে”।
জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ আমার মনে হয় না পুরনো আওয়ামী লীগ জমানার সঙ্গে ভারতের নিছকই ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই জানি, ওই সম্পর্কে কার কী স্বার্থ ছিল। তবে নিজেদের কথা বলতে পারি, আমরা চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান এবং সমতার মাধ্যমে। পড়শিদের সঙ্গে কার্যকরী এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব”।
আইএ/এমআর//