শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে বছরে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে বলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি জানিয়েছে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানের তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানা গেছে।
প্রেস সচিব বলেন, শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে অর্থনীতির প্রতিটি খাত ধরে ধরে আলাদা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে উন্নয়নের গল্প সাজাতে কিভাবে পরিসংখ্যানকে ম্যান্যুপুলেট করা হয়েছে। উন্নয়নের গল্প শোনানো হলেও ভেতরে ভেতরে চলেছে লুটতরাজের এক মহাযজ্ঞ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। তারা যতটা ভেবেছিলেন সমস্যাটি তার চেয়ে গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে চামচা পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে।
কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁরা ২৯টি প্রকল্প বাছাই করে তার মধ্যে ৭টি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন যে প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এই ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন (৮ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, এ সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তাঁর মতে, ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শও দেন সিপিডির সম্মাননীয় এই ফেলো।
কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।
কমিটির আরেক সদস্য ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম তামিম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং এর ১০ শতাংশ যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয়, তাহলে তার পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে কমিটির সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল একটা আতঙ্কের বিষয়। আমাদের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলেননি’
তিনি বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত।
আই/এ
