বিনোদন

মাদককাণ্ডে নাম জড়িয়েছেন তিন মডেল-অভিনেত্রী

বিনোদন ডেস্ক

ছবি: বায়ান্ন টিভি

বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে মাদকের ভয়ংকর চক্রে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী তানজিন তিশা, মুমতাহিনা টয়া, সাফা কবিরের বিরুদ্ধে। এছাড়া,  মাদককাণ্ডে নাম জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকায় বসবাসরত পশ্চিমবঙ্গের সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েকের বিরুদ্ধেও। এসব অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পীর বিরুদ্ধে সরাসরি মাদক কেনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

গেলো বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকা বিমানবন্দরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীপের মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া যায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। যেখানে শোবিজ তারকাদের সরাসরি মাদক অর্ডারের প্রমাণ মেলে।

দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নাট্যাঙ্গনের জনপ্রিয় কিছু তারকার নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়ার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। দীপ নিয়মিত সিসা, মিথাইল এনিডিওক্সি মেথামফেটামিন (এমডিএমএ), লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) এবং ক্যানাবিস ইন্ডিকা স্ট্রেন (কুস) নামক মাদক বিক্রি করতেন। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ে দেখা গেছে, সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধি নায়েক সাংকেতিক ভাষায় মাদক অর্ডার করতেন। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

নারকোটিক্স বলছে, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক ছাত্র দীপের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণ করে ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে ২ দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারকোটিক্সের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, দীপকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে মৌখিক স্বীকারোক্তির একপর্যায়ে দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে।

এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেয়া মাদকের অর্ডারসংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়।

নারকোটিক্স সূত্রে জানা গেছে, দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধি নায়েকের নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে নম্বরগুলো যাচাইয়ের জন্য ফোন নম্বরের রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলো সাফা কবির এবং টয়ার নামেই রেজিস্ট্রেশনকৃত। তবে তানজিন তিশার নম্বরটির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে তার মা উম্মে সালমার নামে।

কয়েকটি চ্যাটিং রেকর্ডে দেখা যায়,  চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল সাফা কবির তার মোবাইল নম্বর থেকে ৩টি মিথাইল এনিডিওক্সি মেথামফেটামিন (এমডিএমএ) অর্ডার দেন। এজন্য দীপের হোয়াটসঅ্যাপে তিনি সংক্ষেপে লেখেন ‘ই’ দিতে পারবা আমাকে ৩টা।’ পালটা বার্তায় দীপ লেখেন দাঁড়াও বলি। সাফা লেখেন ‘ওকে’। এরপর দীপ লেখেন কিভাবে নিবা? যাওয়ার পথে? সাফা লেখেন ‘আমি চেষ্টা করব।’

এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর আরেক চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দেন অভিনেত্রী টয়া। তিনিও সাংকেতিক ভাষায় লেখেন ‘ই’ লাগবে ৫টা। ফিরতি বার্তায় দীপ লেখেন ‘ফর বাংলা ফ্রুট?’ (সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট পার্টি)। এরপর টয়া লেখেন ‘ইয়াপ (ইয়েস)।’

মাদক বিক্রির এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আরো কয়েকজন অভিনেত্রী ও সংগীত শিল্পীর চ্যাটিং পাওয়া যায়। এদের অন্যতম হলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা এবং সংগীত শিল্পী সুনিধি নায়েক। চ্যাটিংয়ে সুনিধি নায়েক কয়েকটি ব্র্যান্ডের এমডিএমের প্যাকেট শেয়ার করে অর্ডার দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়ে থাকে। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘এসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা টিএসসি নামে কেনাবেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে তরল গাঁজা সেবন করা হয়।

নারকোটিক্স সূত্র বলছে, ভারতীয় নাগরিক সুনিধি নায়েক দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। বাংলাদেশের নামকরা সংগীত শিল্পী এবং কোক স্টুডিওর অন্যতম উদ্যোক্তা শায়ান চৌধুরী ওরফে অর্ণবকে বিয়ে করে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তবে সম্প্রতি অর্ণবের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে এমন কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় শোনা যায়।

জেডএস/ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভয়ংকর মাদক