আমাদের মধ্যে অনেকেই ১৩ সংখ্যাটিকে খুব সাবধানে এড়িয়ে চলেন। কারণ ১৩ সংখ্যা মানেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘আনলাকি’ শব্দটি। এই সংখ্যাই যেন সবচেয়ে খারাপ, দুর্ভাগ্য ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট- এমনটাই মনে করেন অনেকে।
কিন্তু ১৩ সংখ্যাটিকে এত ‘অপয়া’ মনে করার কারণ কী? পশ্চিমী সংস্কৃতিতে আদিকাল থেকেই যেন সংখ্যাটির সঙ্গে খারাপ ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে।
নর্সের পুরাগাথা অনুযায়ী, ভালহাল্লার হলঘরে ১২ জন দেবতা নৈশভোজের উদ্দেশে বসেছিলেন। কিন্তু সেখানে ‘লোকি’কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাগের বশে ছলচাতুরি করে তিনি এক দেবতাকে বশীভূত করে তাকে দিয়ে অন্য দেবতাকে মেরে ফেলেন।
খ্রিস্টান মত অনুযায়ী, ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর সঙ্গেও এই সংখ্যাটি জড়িত। কেউ কেউ বলেন, যিশু নাকি সে দিন ১৩ নম্বর আসনে বসেছিলেন। যদিও বাইবেলে এর কোনও উল্লেখ নেই।
শুধু পুরাণেই নয়, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব দেখা দেয়। কিন্তু তার সূত্র অন্য। ১৯৭০ সালে ১১ এপ্রিল ‘অ্যাপোলো ১৩’ দুপুর ১টা ১৩মিনিটে (১৩:১৩) তার যাত্রা শুরু করে। ১৩ এপ্রিল অক্সিজেন ট্যাঙ্কে গুরুতর সমস্যা দেখা দেওয়ায় ‘অ্যাপোলো ১৩’ আবার ফিরে আসে। এই ঘটনা থেকেই বিজ্ঞানীদের মনে ধারণা জন্মায়, ১৩ সংখ্যাটি তাদের জন্য অশুভ। এরপর তারা কোনও নতুন মিশনের জন্য স্যাটেলাইট বা রকেট লঞ্চ করলে ১৩ নম্বরটি এড়িয়ে গিয়ে অন্য নম্বর দিয়ে নামকরণ করতেন।
আয়ারল্যান্ডের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্লেটে যে নম্বর লেখা হয় তার প্রথম দু’টি সংখ্যা যে সালে গাড়িটি কেনা হয়েছে তার উল্লেখ থাকে। যেমন ২০১০ সালে কোনও গাড়ি কেনা হলে প্রথম নম্বরদু’টি ১০, ২০১১ সালে কোনও গাড়ি কেনা হলে প্রথমে ১১ লেখা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০১৩ সাল পড়তেই গাড়ি বিক্রেতাদের মাথায় হাত পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী, নম্বর প্লেটে প্রথম দু’টি নম্বর ১৩ হওয়ার কথা। নম্বরটি অশুভ হওয়ার ফলে কেউ গাড়ি কিনতে চাইবেন না বলে ভেবেছিলেন বিক্রেতারা। ফলে, সেই বছরের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেন তারা। ঠিক করা হয়, ২০১৩ সালের প্রথম ছয় মাসে যাঁরা গাড়ি কিনবেন তাঁদের গাড়ির নম্বরের প্রথমে ১৩১ এবং পরবর্তী ছয় মাসে যাঁরা গাড়ি কিনবেন তাঁদের গাড়ির নম্বরের প্রথমে ১৩২ লেখা থাকবে।
বিদেশে এমন বহু হাসপাতাল এবং হোটেল রয়েছে যেখানে ১৩ নম্বরটি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এমনকি, লিফ্টের মধ্যেও ১৩ নম্বর ব্যবহার করা হয় না। ১৪ সংখ্যাটি থেকে আবার ক্রমানুসারে ব্যবহার করা হয়।
এই সংখ্যাটি ভয় পাওয়ার একটি বিশেষ নামও রয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় এটি ‘ট্রিসকাইডেকাফোবিয়া’ নামে পরিচিত। স্টিফেন কিং, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট-সহ বহু নামী ব্যক্তির এই ভীতি ছিল।
এই ভয় কাটানোর জন্য ১৮৮১ সাল থেকে নিউ ইয়র্কের কয়েকজন মিলে ‘থার্টিন ক্লাব’ তৈরি করে। জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সদস্য নিয়ে ১৩ নম্বর ঘরে বসে তারা এই বিষয় নিয়ে আলোচনাও করতেন।
খেলোয়াড়েরাও তাদের জার্সিতে ১৩ সংখ্যাটির ব্যবহার করে এই কুসংস্কার ভাঙতে শুরু করেন।
তবে, কোনও কোনও জায়গায় এই সংখ্যাকে শুভ মানা হয়। ফ্রান্স এবং ইটালিতে কোনও শুভ বার্তা পাঠাতে হলে পোস্টকার্ডের উপর ১৩ সংখ্যাটি লেখা হয়।
অনন্যা চৈতী