বিনোদন

২০২৪ সালে বাংলাদেশি বিনোদন জগতের নিভে যাওয়া তারকারা

বিনোদন ডেস্ক

বিনোদনে অঙ্গন থেকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ হারিয়েছে অনেক গুণী শিল্পীকে। তাদের জীবনের শেষ অধ্যায় এলেও, কাজের মাধ্যমে তারা ভক্তদের হৃদয়ে রয়ে যাবেন আজীবন। আসুন একনজরে দেখে নেই, এ বছর আমাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন যারা।

জাহিদুল হক 

জনপ্রিয় গীতিকবি ও সাংবাদিক জাহিদুল হক ১৫ জানুয়ারি মারা যান। তার লেখা অমর গান ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ আজও আমাদের হৃদয়ে জ্বলজ্বল করে। ষাটের দশকের এই প্রতিভাধর গীতিকবির অবদান সংগীতপ্রেমীদের কাছে অমূল্য।

আহমেদ রুবেল

অভিনয়জগতের আরেক আলোচিত নাম, আহমেদ রুবেল, হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে যান। নুরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’ ছবির প্রদর্শনীতে যোগ দিতে গিয়ে তিনি আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। তার অভিনীত চরিত্র ‘ঘোড়া মজিদ’ সহ বহু স্মরণীয় চরিত্র থেকে যাবে দর্শকদের মনে।

সাদি মহম্মদ 

বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ১৩ মার্চ মারা যান। রবীন্দ্রসংগীতে তার অবদান চিরস্মরণীয়। শান্তিনিকেতনের ছায়ায় গড়ে ওঠা এই শিল্পী আমাদের শোনার স্মৃতিতে বেচে থাকবেন তার অসাধারণ গান দিয়ে।

খালিদ 

আশি-নব্বইয়ের দশকের ব্যান্ড তারকা খালিদ গেলো ১৮ মার্চ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেছেন। ‘চাইম’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ছিলেন তিনি।  তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’ সহ বহু স্মরণীয় সৃষ্টি আজও আমাদের জীবন্ত মনে। ১৯৬৫ সালের ১ আগস্ট গোপালগঞ্জে জন্ম নেন এই শিল্পী। ১৯৮১ সাল থেকে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ‘চাইম’ ব্যান্ডে যোগ দেন।

পাগল হাসান 

সংগীতশিল্পী মতিউর রহমান হাসান, যিনি ‘পাগল হাসান’ নামে পরিচিত, এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর লেখা ও সুর করা গান ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ ভক্তদের মনে থেকে যাবে।

সুনেত্রা 

সোনালি দিনের আলোচিত অভিনেত্রী সুনেত্রা ২০ এপ্রিল মারা যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ওপার বাংলার সিনেমাতেও তাঁর অসামান্য অবদান ছিল। তাঁর মায়াবী অভিনয় এখনও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।

অলিউল হক রুমি 

মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিজ্ঞ অভিনেতা রুমি ২২ এপ্রিল ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষে মারা যান। তাঁর অভিনীত নাটক ও সিনেমাগুলো আজও দর্শকদের কাছে স্মরণীয়।

সীমানা 

মডেল ও অভিনেত্রী সীমানা, যিনি ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচিতি পান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতায় মারা যান। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তাঁর এই চলে যাওয়া বিনোদনপ্রেমীদের ব্যথিত করেছে।

মনির হোসেন জীবন 

নাট্য নির্মাতা ও প্রযোজক মনির হোসেন জীবন ২৭ জুন মারা যান। তাঁর নির্মিত শতাধিক নাটক ও ধারাবাহিক নাটক, যেমন ‘আজ রবিবার’ এবং ‘চোর কাঁটা’, আজও দর্শকদের বিনোদিত করে।

শাফিন আহমেদ

মাত্র ৬৩ বছর বয়সে মাইলস ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ ২৫ জুলাই মারা যান। ‘আজ জন্মদিন তোমার’ ও ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’ সহ তাঁর গানগুলো দেশীয় ব্যান্ডসংগীতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।মৃত্যুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত। শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’  ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল

 

সংগীতশিল্পী ও টিভি প্রযোজক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে মারা যান। তাঁর ‘কুয়াশা প্রহর’ অ্যালবাম তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

জামালউদ্দিন হোসেন

 

টেলিভিশন ও মঞ্চের প্রখ্যাত অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন কানাডায় মারা যান। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্যের অবদান বাংলা নাট্যজগতে চিরস্মরণীয়।

সুজেয় শ্যাম

 

একুশে পদক এবং শিল্পকলা পদক জয়ী শিল্পী সুজেয় শ্যাম। গেলো ১৭ অক্টোবর ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলো সুজেয় শ্যাম। তিনি  ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা–বাগানের মালিক। তাঁর শৈশব কেটেছে সিলেটের চা–বাগানে। ১০ ভাই–বোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ। সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

মনি কিশোর

২০ অক্টোবর রামপুরার বাসার দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করা হয় মনি কিশোরের। জনপ্রিয় এই গায়কের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা যায়নি। রামপুরার বাসা থেকে উদ্ধার করা মরদেহ প্রসঙ্গে পুলিশের ধারণা ছিল, চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আমার’ তাঁরই সুর করা, তাঁরই লেখা।

মাসুদ আলী খান

বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান ১ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মারা যান । বয়োজ্যেষ্ঠ এই অভিনেতা মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এই । মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বছর পর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পরপর নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক হয়। আর সাদেক খানের ‘নদী ও নারী’ দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর পথচলা শুরু।

আবু জাফর

গীতিকার, সুরকার আবু জাফর ৫ ডিসেম্বর মারা যান। এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির না’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার ও সুরকার তিনি। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল তার সৃষ্টি করা ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি।পাশাপাশি  ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’ ,‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, গানগুলো এখনো তাঁর সময়ের শ্রোতাদের কাছে জড়িয়ে রেখেছে প্রেম-বিরহের নানা স্মৃতি।  

পাপিয়া সারোয়ার

বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ৭২ বছর বয়সে ক্যানসারের সাথে যোদ্ধা করে ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৫২ সালে ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন পাপিয়া সারোয়ার। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র–অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।

সি বি জামান

চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা গেলো ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। ‘উজান ভাটি’ খ্যাত এই নির্মাতা হ্যার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন। হয়। হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি কিডনি সমস্যায়ও ভুগছিলেন সি বি জামান। তার নির্মিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ঝড়ের পাখি, উজান ভাটি, লাল গোলাপ, কুসুম কলি, সুভরাত্রি, দিন যায় কথা থাকে, হিসাব–নিকাশ, পুরস্কার।

মিনহাজ আহমেদ পিকলু

মাত্র ৫২ বছর বয়সে অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক লিড গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। রাজধানীর রামপুরায় গিটার প্রশিক্ষণের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে জ্যামিং ও পারফর্ম করার সময় অসুস্থতা অনুভব করেন। অনুষ্ঠান শেষে চেয়ারে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।তিনি রকস্ট্রাটা, জলি রজার্স, মাকসুদ ও ঢাকা এবং অর্থহীনের মতো ব্যান্ডগুলোয় বাজিয়েছেন। অর্থহীনের জনপ্রিয় গান ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি’, ‘সূর্য’, ‘রাতের ট্রেন’, ‘গুটি’, ‘নির্বোধ’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানে গিটার বাজিয়েছেন পিকলু।

জেডএস/ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বিনোদন