পিটার ডি হাসের উত্তরসূরি হিসেবে নতুন রাষ্ট্রদূত না আসা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ঝানু কূটনীতিক ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মূলত বাংলাদেশে সংস্কারপ্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে, পিটার ডি হাসের উত্তরসূরি হিসেবে ডেভিড মিলিকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে মার্কিন সিনেটে মনোনয়নের শুনানি না হওয়ায় তার নিয়োগটি এখনও ঝুলে আছে।একারণে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় আসছেন না ডেভিড মিলি। তাই নতুন রাষ্ট্রদূত না আসা পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন।
১৭ বছর আগে বাংলাদেশে দুই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যাওয়া-আসার মাঝখানে ঠিক এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ২০০৮ সালে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বা ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব সামলিয়েছেন গীতা পাসি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পিটার হাসের উত্তরসূরি যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত ট্র্যাসি জ্যাকবসন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স-সিডিএ) হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। এমনটি জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সূত্রগুলো বলছে, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে ট্র্যাসি জ্যাকবসনের ঢাকায় এসে দায়িত্ব নেবেন। এর আগে, গেলো বুধবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে বৈঠক করেছেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী মিয়ানমারের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ট্র্যাসি জ্যাকবসনের মতো একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে অন্তর্বর্তী সময়ে ঢাকায় বিশেষ দায়িত্বে পাঠানো হচ্ছে।
পেশাদার ও ঝানু কূটনীতিক ট্র্যাসি জ্যাকবসন তুর্কমিনিস্তান, তাজিকিস্তান ও কসোভোয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া কূটনীতিক হিসেবে রাশিয়া, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও লাটভিয়ার মার্কিন দূতাবাসে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে অবসরে যান জর্জ হপকিনস ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী পেশাদার এই কূটনীতিক। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে উপনির্বাহী সচিবের পদে কাজ করেছেন।
২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন অবসর থেকে তাকে ডিপার্টমেন্টট অফ স্টেটের সিনিয়র উপদেষ্টা পদে ফিরিয়ে আনেন। একই বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আফগানিস্তান–সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের পরিচালক হন ট্র্যাসি জ্যাকবসন। পরবর্তীতে তাঁকে ইথিওপিয়ায় দেড় বছরের জন্য ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জো বাইডেন ইরাকে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁকে মনোনীত করেন। গত বছরের জুনে ওই মনোনয়নের বিষয়ে মার্কিন সিনেটে শুনানি হলেও নিয়োগটি ঝুলে ছিল।
প্রসঙ্গত, কাকতালীয় হলেও ২০০৭ সালের মতো এবারও বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালনের সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব কিছুদিন পালন করবেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স- সিডিএ। ২০০৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস। তবে ১৪ মাসের মাথায় হঠাৎ করেই ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন জর্জ ওয়াকার বুশ প্রশাসন। ফলে অনেকটা তাড়াহুড়া করেই প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস ঢাকা ছেড়ে বাগদাদ চলে যান। ২০০৮ সালের এপ্রিলে জেমস এফ মরিয়ার্টি পরের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে ৯ মাস ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছিলেন গীতা পাসি।
এসি//